।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরের এক মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, ভবনের টিন বিক্রি করে অর্থ আত্মসাত, টাকার বিনিময়ে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগি ও স্থানীয় মানুষজন মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ওই সুপারকে মাদ্রাসায় অবরুদ্ধ করে রাখে। কয়েক ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর স্থানীয় ভাবে আপোস মিমাংসা করে ছেড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে ওই এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা গেছে, গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুড়া দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় মাও. মোকছেদ আলী মৌলভী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর সুপারের পদ শূন্য হলে ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর ব্যবস্থাপনা কমিটি মাও. মোকছেদ আলীকে সুপার হিসেবে নিয়োগ দেন। নিয়োগ পাওয়ার পর তার পছন্দের লোকজন দিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিষদের আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। অভিযোগ রয়েছে কমিটির আহবায়ক মোস্তাফিজার রহমান ওই সুপারের আপন ভগ্নিপতি। এরপর থেকে আহবায়ক কমিটির সাথে যোগসাজশ করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন।
মাদ্রাসার একটি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর মাদ্রাসার পিয়ন আবুল হোসেন মারা যান। পরে প্রতিষ্ঠানের সকলের সম্মতিক্রমে আবুল হোসেনের পুত্র শাহীন মিয়াকে ওই পদে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু মাদ্রাসার সুপার মাও. মোকছেদ আলী বিভিন্ন সময় শাহীন আলমের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু সুপার চাকুরি না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন।
সাবেক অফিস সহকারি মৃত আবুল হোসেনের পুত্র শাহীন আলমের অভিযোগ, আমি গরীব মানুষ। বাবা মারা যাওয়ার পর সকলে আমার চাকরির জন্য সুপারিশ করেন। সুপার হুজুর পিয়ন পদে আমাকে নিয়োগ দেয়ার নামে বিভিন্ন অজুহাতে ৮ লাখ টাকা নিয়েছেন। একে একে ৬ বার ওয়ান্টটেড করিয়েছেন এবং ডিজির প্রতিনিধির জন্য নিয়োগ বোর্ড গঠন করেছেন। নিয়োগ নিতে আমার জমা-জমি বিক্রি করে সুপারকে টাকা দেয়ায় নিঃস্ব হয়ে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এ ঘটনায় ২৮ সেপ্টেম্বর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সুপারকে অবরুদ্ধ করে রাখছিল।
এদিকে কর্মরত শিক্ষকদের অভিযোগ, করোনা কালীন মাদ্রাসা দীর্ঘসময় বন্ধ থাকায় সুপার ঘরের চালের টিন বিক্রি করেছেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের নিকট জোড় পূর্বক সেশন ফি আদায়, নবম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক টাকার বিনিময়ে বিতরণসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো যথাযথ ভাবে পালন না করার অভিযোগ ওই সুপারের বিরুদ্ধে।
নাগড়াকুড়া দারুল উলুম দাখিল মাদরাসার সুপার মাও. মোকছেদ আলীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাহীন আলমের নিকট নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে টাকা ও নিলামে টিন বিক্রয়ের অর্থ বিভিন্ন খাতে খরচ করেছেন। পাঠ্যপুস্তক বিতরণে টাকা নেয়ার কথা জানতে চাইলে সেশন ফি নিয়ে বই দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অনেক ছাত্র ঢাকায় চাকুরি করার কারণে বই নেয় নাই। নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেননি কেন? এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন নাই।
মাদ্রাসার এড-হক কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, যেহেতু করোনা কালীন দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল সকল নিয়ম-কানুন কিছুটা হলেও স্থবির হয়ে পড়েছিল। এখন যেহেতু মাদ্রাসা খুলেছে কমিটি নেই। কমিটি হলে শাহীন আলমের নিয়োগ থেকে শুরু করে যাবতীয় সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য শিক্ষক-কর্মচারী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে আমন্ত্রণ জানাবো। যেদিন পরিচিতি মিটিং হবে তার পরের দিন চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে চেষ্টা চালাবো এবং সমাধান করবো।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ্ মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন,ওই মাদ্রাসার অনেক অভিযোগ রয়েছে। মূল সমস্যা হলো নিয়মিত কমিটি নেই আর সুপার কমিটি করেন নাই। এড-হক কমিটি ছিল ওই কমিটিতে সুপারের মনঃপুত একজন লোককে সভাপতি বানিয়েছে সেটা নিয়েও শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন সর্বপরি তাদের মাদ্রাসার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন খাতের যে টাকা-পয়শা রয়েছে যাতে উত্তোলন করতে না পারে আমি ব্যাংকে চিঠি দিয়েছি। একটা কমিটি হলে আমি দেখাশুনা করে সমস্যাগুলো সমাধান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/অক্টোবর/০৭/২১