।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে সরকার ঘোষিত কঠোরতম লকডাউনের মধ্যেও থেমে নেই বিভিন্ন এনজিওর কিস্তির আদায়। এনজিওর কর্মীরা ঋণ গ্রহিতাদের মোবাইল ফোনে কিংবা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে নানান কৌশলে চাপ প্রয়োগ করে কিস্তির টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের দেয়া লকডাউন মানতে গিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের আয় বন্ধ হলেও বন্ধ হয়নি এনজিও গুলোর কিস্তি আদায়।
জানা গেছে, সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি সকল অফিস বন্ধ থাকার কথা। সড়ক ও নৌপথে সকল ধরণের যন্ত্রচালিত গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দারিদ্র পীড়িত এ জেলার বেশিরভাগ খেটে খাওয়া মানুষ বিভিন্ন এনজিও জালে আবদ্ধ। লকডাউন মানতে গিয়ে এসব মানুষের আয় রোজগার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে অনেক এনজিও গুলো তাদের প্রদেয় ঋণের কিস্তি আদায় করতে তোড়-জোড় শুরু করেন। মানুষের আয় বন্ধ হলেও, বন্ধ হয়নি গরিবের রক্তচোষা এনজিও গুলোর কিস্তি আদায়।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঋণ গ্রহিতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসএসএস, ব্র্যাক, টিএমএসএস, আশাসহ বিভিন্ন এনজিওর কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে কিস্তি আদায় করছেন। সেখানে সামাজিক দুরুত্ব তো দুরের কথা, অনেকেই মাস্ক পড়তেও উদাসীন। অনেকে ঋণ গ্রহিতাদের মোবাইল ফোনে কিস্তির টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন, কিংবা আগামী দিন কিস্তির টাকা আদায় করতে আসবেন বলেও জানান দিচ্ছেন। এসব এনজিও থেকে ঋণ নেয়া সদস্যদের বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবারের। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলার বিষ্ণুবল্লভ গ্রামের লাইলী বেগম,সাহিদা বেগম, মুকুল মিয়া, নিরাশা, সুলতান মিয়া জানান, আমরা গরিব মানুষ। একটু সুবিধার আশায় এসএসএস থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়েছি। লকডাউনে কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্ত এর মধ্যে এনজিও কর্মী রফিকুল ইসলাম বাড়িতে এসে কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন। আমরা কিস্তি দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি আমাদের মরতে বলেন। এনজিও কর্মি রফিকুল একটা কাগজ বের করে দিয়ে বলেন, প্রশাসন আসলে কাগজ দেখাব, আমাদের কিস্তি তোলার অনুমতি আছে। ওই কর্মীর এমন দাম্ভিকতা মোবাইল ফোনে ধারণ করতে গেলে হুঙ্কার দিয়ে উঠেন তিনি, বলেও জানান ভুক্তভোগিরা।
এছাড়াও, বিভিন্ন এনজিওর ঋণ গ্রহিতা মদনার পাড় গ্রামের হাফিজুর রহমান,শিরিনা বেগম, নাওড়ার সুফিয়া বেগম, নাসিমা বেগমসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে হলে একই কথা জানান তারা।
তবে সোসাইটি ফর সোস্যাল সার্ভিসের (এসএসএস) মাঠ কর্মী রফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, লকডাউনেও সীমিত পরিসরে কিস্তি আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে। সেজন্য কিস্তি আদায় করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, লকডাউনে কিস্তি তোলার কোন নিয়ম নেই। লকডাউন বাস্তবায়নে অনেকের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। এসব অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে যদি কেউ চাপ প্রয়োগ করে কিস্তি আদায় তাহলে বিষয়টি অমানবিক। জোর করে কিস্তি আদায়ের বিষয়টি আমাদের অবগত করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/জুলাই/২৮/২১