।। নিউজ ডেস্ক ।।
শৈশব টা ভালই কাটছিল। বাবা-মার আদরের একটুও কমতি ছিলনা রাবেয়ার। পরিবারের পছন্দ মত বিয়েও হয় তার। স্বামীর সংসারে অভাব অনটন থাকলেও দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল। এরই মধ্যে একটি পুত্র ও কন্যা সন্তানের মা হন তিনি। একসময় স্বামী সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে (নাইওর) আসেন। এরপরই বিপত্তি ঘটে তার জীবনে। বাবার বাড়ি থেকে স্বামী সন্তান নিয়ে দিনাজপুরে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পথে স্বামী খাজি মোল্লা ৭ বছর বয়সী পুত্র সন্তান আলী হোসেনকে নিয়ে লাপাত্তা হন। অনেক খোঁজাখুজির পর আজও তাদের সন্ধান পাননি রাবেয়া বেগম। এখনও পথের পানে চেয়ে থাকেন নাড়ী ছেড়া ধন আলী হোসেনের জন্য।
রাবেয়া বেগম (৬৭) দূর্গাপুর ইউনিয়নের ভেলুর খামারের আব্দুল্লাহর মেয়ে। কয়েক বছর আগে একমাত্র মেয়ে রাশেদা বেগম বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। বাবা মা মারা যাওয়ার পর ভাইদের অভাবের সংসার ছাড়তে বাধ্য হন রাবেয়া। এরপর ঠাই হয় একই গ্রামের জনৈক আবুল কালামের বাঁশঝাড়ে। এলাকাবাসীর সহায়তায় কয়েকটি টিনের একটি ছোট ঘরে প্রায় ৮ বছর ধরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। বয়সের ভারে ঠিকমত চলতেও পারেননা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার উলিপুর উপজেলা শতভাগ ভাতা নিশ্চিত করলেও রাবেয়া বেগমকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় আনতে চার হাজার টাকা দাবি করেন ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম। গত এক বছর পূর্বে ভিক্ষা করে দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করলেও ভাতার কার্ড পাননি তিনি।
এ সময় কথা হয় রাবেয়া বেগমের সাথে। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, মোর ভাতা আর কখন হইবে, বাঁচি থাকতে যদি না হয়, তা হইলে মরার পর হইবে, মোর কাইও নাই বা। ২৫ বছর আগে মোর বাপক (সন্তান) নিয়ে মোর স্বামী পলাইছে। কত খুঁজিছং, তবুও মোর বাপক (সন্তান) পাং নাই। আল্লাহ্ যদি মোর ছাওয়াটাক ফিরি দিলে হয়। অশ্রুসজল চোখে তিনি আরো বলেন, আগে শরীলত (শরীরে) বল (শক্তি) আছিল (ছিল) মানষের বাড়িত যায়া খুঁজি খাছনু (খাইছিলাম)। এখন হাটপেরও পাংনা, খাবারও পাংনা। কাইও দয়া করি দিলে খাং, না দিলে অনাহারি (অভুক্ত) থাকং। মোর বাপ (সন্তান) থাকলে সে খাওয়াইল হয়। আজ তোমরা গুলা আনছেন, তোমরায় মোর বাপ হন। মুই দোয়া করং আল্লাহ্ তোমাক মেলা (দিন) বাঁচে থুউক। এভাবে বলতে বলতে অঝোড়ে কেঁদে ফেলেন রাবেয়া বেগম। এসময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, তার ভাতা এখনো হয়নি।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মশিউর রহমান বলেন, ভাতা কার্ড করতে কোন টাকা লাগে না। রাবেয়া বেগমের কাছ থেকে যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে, তাহলে সেটি নিতান্তই ঘৃণিত। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে যতদ্রুত সম্ভব তাকে ভাতা কার্ডের আওতায় আনা হবে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/জুলাই/২৫/২১