।। আব্দুল মালেক ।।
জীবনের শেষ সম্বলটুকু চলে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদের পেটে। সবকিছু হারিয়ে আশ্রয় হয়েছিল উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের সোলার বাজার বাঁধ রাস্তার পাশে। সেখানেই ছেলে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে দিন কাটত জোবেদা বেওয়ার (৭৮)। কিন্তু মুজিব বর্ষে স্বপ্নের নতুন ঘরে এবার প্রথম ঈদ করবেন তিনি। এ যেন এক অন্য রকম আনন্দ।
জোবেদা বেওয়া বলেন, নদী হামার সউক ভাসি নিয়ে গেছে। বান্দের আস্তায় আসি কোন রকম ঘর তুলি, ছাওয়া পোওয়া নিয়ে দিন কয়টা কাটপার লাগছিনু বা। ইয়ারে মদ্দে সরকার হামাক ঘর দেইল। আইতত (রাতে) এলা (এখন) হামরা শান্তিতে নিন্দ (ঘুম) পারবের পাই। জীবনে কখনও ইটের ঘরত থাকিম কুনদিনও ভাববের পাংনাই। নয়া ঘরত ঈদ করমো। কি যে ভাল নাগছে বা। এমন একটি ঘর পাবেন এটা তার কাছে যেন স্বপ্নের মত।
‘মুজিববর্ষের অঙ্গিকার – গৃহ হবে সবার’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ উপজেলায় ১৩ টি ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীদের পূনর্বাসনের জন্য ক শ্রেণির সাড়ে ৩৫০ পরিবারকে দুই শতক জমির মালিকানাসহ ৩৯৪ বর্গফুট আয়তনের দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি করে সেমি পাকা ঘর উপহার দেয়া হয়। প্রতিটি ঘরে ৩ ফুট প্রস্থ ৬ ফুট উচ্চতা একটি দরজা, ৪ টি জানালা, একটি রান্না ঘর ও একটি বাথরুম রয়েছে। গৃহহীনরা এই ঘর পেয়ে আনন্দে উদবেলিত।
আরেকজন চিনবানু বেওয়া (৮৫)। উপজেলার ধামশ্রেণী ইউনিয়নের ইন্দারার পাড়ের বাসিন্দা তিনি। জীবন সায়াহেৃ এসে ঠিক মত চলতেও পারেন না। গত ৫ বছর আগে স্বামী কদিম বকস মারা যান। দুই ছেলে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে অন্যের ভিটায় আশ্রিত। জীবনের পুরো সময়টা কাটিয়েছেন অন্যের ভিটায়। অভাবের সংসার, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। জমি কিনে বাড়ী করার সামর্থ্য ছিল না তার। অন্তিম বয়সে এসে দুই শতক জমির দলিল ও দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি সেমি পাকা ঘর পেয়েছেন তিনি। এসময় কথা হয় চিনবানু বেওয়ার সাথে। তিনি বলেন, আগে ঝঁড়ি আসলে ভয় নাগছিল। শীতের সময় টিনের ছেদ দিয়ে পানি পড়ে গাও ভিজি গেছলো। এখন আর হামার কোন ভয় নাই। সরকার ঘর দিয়ে হামার মত গরিব মানষের মেলা উপকার করছে। ছাওয়া পোওয়া নিয়ে সুখে শান্তিতে আছি। এভাবেই আবেগাপ্লুত হয়ে অশ্রুভেজা চোখে কথাগুলো বলেন তিনি।
জোবেদা বেওয়া কিংবা চিনবানু বেওয়া নন। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকারের দেয়া ঘর পেয়েছেন, বাগচির খামার ভাষাপাড়া এলাকার এন্তাজ আলী, মোস্তফা মিয়া, পারুল বেগম, প্রতিবন্ধী পারভেজ মিয়া, মিনহাজুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলাম, হাতিয়া গামের আম্বার আলী, লিয়াকত আলী, মজিবর রহমান, নুর ইসলাম, ওলামাগঞ্জ গ্রামের মিনু বেগমসহ অনেকেই।
সরেজমিনে উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ রংয়ের সারি সারি দৃষ্টি নন্দন বাড়ী। বাড়ীগুলো দেখে যে কোন কারো নজর কাড়তে পারে। এক সময় যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। তারাই আজ সেই ঘরের মালিক।
হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রতি বছর নদী ভাঙনের শিকার হয়ে শত শত মানুষ বাস্তুহারা হয়ে বাঁধ রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। এসব ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য এ ইউনিয়নে ২৮টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে বরাদ্দ বেশি হলে আমার ইউনিয়নের অসহায় মানুষগুলো আরো উপকৃত হত।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও প্রকল্পের সদস্য সচিব সিরাজউদ্দৌল্লা বলেন, দুই ধাপে এ উপজেলায় ৩৫০ পরিবারকে খাস জমি উপর একটি করে দৃষ্টিনন্দন ঘর দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাই ছিল না। ঘর পেয়ে দরিদ্র এ জনগোষ্ঠির সামাজিক মর্যাদাসহ জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও প্রকল্পের সভাপতি নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে জায়গা নির্বাচন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পূনর্বাসনের জন্য এত সুন্দর একটি করে ঘর তৈরি করে দিতে পেরেছি, এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আশা করি এসব ঘর পেয়ে সুবিধাভোগিরা অনেক উপকৃত হবেন।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/জুলাই/১৯/২১