।। জেলা প্রতিনিধি ।।
ভাঙ্গন কবলিত চিলমারী। নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হাজারো মানুষ। হাজারো পরিবার সব কিছু হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল বাঁধে, সেটিও ছাড়তে হয় তাদের। আশ্রয়হারা মানুষের পাশে দাঁড়ান সরকার, হাতে নেন আশ্রয়ণ প্রকল্প। শত শত মানুষ ফিরে পায় একটি শান্তির নীড়। কিন্তু সেই শান্তির নীড় মৃত্যু ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সদ্য আশ্রয় নেয়া মানুষজনের। বৃষ্টির সাথে ধসে পড়তে শুরু করেছে চরফেসকা বাবদ হাতিয়া বকসী আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যারাক, ওয়াল ভেঙে যাচ্ছে। আশ্রয় হারিয়ে সদ্য আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো দিশাহারা। নজর নেই কর্তৃপক্ষের।
জানা গেছে, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্প মাটি ভরাটের কাজ হয়। চর ফেসকা বাবদ হাতিয়া বকসী আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাট বাবদ প্রায় ৭শত টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। শুরু থেকেই মাটির ভরাট কাজেও নেয়া হয় অনিয়মের আশ্রয় ফলে বৃষ্টির সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে মাটির ধস দেখা দেয়। জোড়াতালি আর অনিয়মের মধ্য দিয়ে মাটির কাজ সমাপ্ত করে তা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করেন স্থানীয় প্রশাসন। কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ পদাতিক ডিভিশন রংপুর সেনানিবাস এর বাস্তবায়নে ৪৮টি ব্যারাক নির্মাণের সহায়তা করেন মেসার্স হাওলাদার এন্টারপ্রাইজ, বরিশাল। ব্যারাক নির্মাণের পর গত কয়েকমাস আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্থানীয় প্রশাসনকে ৪৮টি ব্যারাকের ২৪০ পরিবারের ঘর হস্তান্তর করেন। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় আশ্রয়হীন পরিবারকে পরিবার প্রতি ১টি করে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। আশ্রয়হারা মানুষজন একটি আশ্রয়ের ঠিকানা আর পাকা ঘর পেয়ে যেমনটি আনন্দিত হয়েছিল ঘর ও মাটির ধসের সাথে তাদের আনন্দ গেছে উড়ে সুখের স্বপ্ন যেন ধসে পড়তে শুরু করেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন স্থানে স্থানে মাটি ধসে গেছে এবং ধসে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক। এসময় কথা হলে বৃদ্ধা সাহিদা (৫৫) বলেন বহে কি আর কমু নদী সউগে ভাঙ্গি নিচে আছিনু বানের রাস্তাত (বাঁধে) সেটাও ভাঙ্গি দিছে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও মানুষ, পরে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় পাইছোং। মনে বড় সুখ পাছিনু কিন্তু সেই সুখ উড়ে গেইছে, এই ঘরত (ঘরে) থাকতে ভয় হয় খালি মনে হয় কখন যেন ভাঙ্গি যায়, কন না বাহে ঘরের যে অবস্থা জীবন হামার যেন কচুর পাতায় পানির মতো হবার নাগছে, (কয়না কচুর পাতার পানি এই বুজি পড়ে তেমন হইছে) আর মনে হয় কখন জানি ভাঙ্গি পড়ে এই বুঝি জীবন হারাই।
আশ্রয় নেয়া জয়নাল বলেন, মাটি ভরাট কাজ ভালো না হওয়ায় চারপাশে ধস শুরু হয়েছে। এছাড়াও ঘরের কামও নিম্নমানের হওয়ায় ভাঙ্গি যাবার নাগছে। ইট নিম্নমানের ও সিমেন্ট সঠিক ভাবে দেয়া হয়নি মন্তব্য করে রুহুল আমিন বলেন, ঘরত থাকতে ভয় লাগে হাত দিয়ে জোরে ধাক্কা দিলে খসে পড়ে। এসময় আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেন, বৃষ্টির শুরু সাথে সাথে ধসে পড়তে শুরু করেছে মাটি ও আশ্রয়ণের ঘর গুলো। বাতাস হলে মনে হয় কখন যানি টিন গুলো উড়ে যায়। এসময় তারা কাজের মান নিম্ন বলেও মন্তব্য করেন।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন রিসিভ করেননি। ধসে যাওয়ার কথা স্বীকার করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কহিনুর রহমান বলেন সরেজমিন ঘুরে এসেছি এসময় তিনি মাটির কাজ সঠিক হয়েছে দাবি করেন এবং বলেন অতিবৃষ্টির কারণে সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, সরেজমিন দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//সুভাষ/জুলাই/১০/২১