।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত মে ও জুন মাসের ৬০ কেজি চালের মধ্যে ওজনে ৮ থেকে ১০ কেজি করে চাল কম দেয়ার অভিযোগ করেন সুবিধাভোগিরা। এ ঘটনায় ইউপি কার্যালয়ের সামনে সুবিধাভোগি কার্ডধারীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। ঘটনাটি শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুরে উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নে।
জানা গেছে, ওই ইউনিয়নে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় ২১০জন দুস্থ্য নারীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে অসৎ উদ্দেশ্যে শুক্রবার বন্ধের দিন ইউপি চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসারের যোগসাজসে মে ও জুন মাসের ৬০কেজি চালের পরিবর্তে প্রত্যেক সুবিধাভোগিকে ৫০-৫২ কেজি করে চাল হাতে তুলে দেন গ্রাম পুলিশরা। চাল কম দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন কার্ডধারীরা। এমন খবর পেয়ে ধামশ্রেনী ইউপি কার্যালয়ে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে দ্রুত পরিষদে তালা দিয়ে সটকে পড়েন গ্রাম পুলিশরা। এ ঘটনায় প্রায় ঘন্টাব্যপী বিক্ষোভ করেন সুবিধাভোগিরা।
কার্ডধারী জানাহারা, সাদেকা, ইসতোমা, মমতাজ, জোহরা, চায়না, সুফিয়া পারভীন, ছক্কু মিয়া, মরিয়ম বেগম, তরিকুল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন , দুই মাসের ৬০ কেজি চাল দেয়ার কথা। কিন্ত শুক্রবার চৌকিদারেরা বস্তা খুঁলে ৬০ কেজি চালের পরিবর্তে ৫০ থেকে ৫১ কেজি চাল দেয়া হয়। আমরা এর প্রতিবাদ করলে চৌকিদারেরা ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন। তারা আরো বলেন, এখন কোন কথা বললে আগামীতে তাদের চাল বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান চৌকিদারেরা।
কার্ডধারী আফরোজা বেগম বলেন, আমার কার্ড হয়েছে কিন্ত আমি এক মাসের চালও পায়নি। এবার চাল নিতে আসছি। কিন্তু চৌকিদারেরা কার্ডে সই(স্বাক্ষর) নিয়ে রেখে দেন। এখন আপনারা আসাতে তারা (চৌকিদার) পালিয়ে গেল। এবারও চাল পাব কিনা ঠিক নাই।
এছাড়াও কার্ড ধারী, মনোয়ারা, হাসিনা বেগম, জেসমিন, রুবেনা বেগম, আমিনা, শিরিনা, মোর্শেদা বেগমসহ কয়েকজন সুবিধাভোগির অভিযোগ, দফাদার ছকিয়তসহ অন্য চৌকিদাররা আমাদের কাছ থেকে ভিজিডি কার্ডে স্বাক্ষর নিয়ে কার্ড জমা নেয়। কিন্তু তারা চাল না দিয়ে পালিয়ে গেছে।
পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প (বিআরডিবি‘র) উপ প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসার মো. রিয়াজুল হক বলেন, শুক্রবার চাল বিতরণ করা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) চেয়ারম্যানের প্রতিনিধির মাধ্যমে জানতে পারি ভিজিডির চাল বিতরণ করা হবে। তবে কবে নাগাদ চাল বিতরণ করবে সেটা আমার জানা ছিল না। আমি ট্যাগ কর্মকর্তা হলেও বিতরণের সময় তারা আমাকে কিছু জানায় না। এ বিষয়ে আমি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে একাধিকবার অভিযোগও করেছি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রাখিবুল হাসান সরদারের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহানা আক্তার বলেন, ভিজিডি চাল বিতরণ করতে হলে আমাদের চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। বিতরণকালে অবশ্যই ট্যাগ অফিসারকে উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্ত তারা কিছুই মানেননি। শুক্রবার চাল বিতরণ ও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগে বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, ভিজিডির চাল ওজনে কম দেয়ার খবর পেয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছি। চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে বিতরণ করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/জুলাই/০৯/২১