।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে সেচ লাইসেন্স দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে। জালিয়াতির মাধ্যমে একই লাইসেন্স একাধিক ব্যক্তিকে ও সভার রেজুলেশনে স্মারক ছাড়াই দেয়া হয়েছে সেচ লাইসেন্স। এভাবেই হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এই সিন্ডিকেট চক্রটির সাথে সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আর বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত কৃষক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় সেচ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন ২৯৭ জন কৃষক। এর মধ্যে গত ২৭ জানুয়ারি সেচ কমিটির যাচাই বাচাই সভায় ২২১টি আবেদনকে বৈধ এবং ৭৬টি আবেদনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। গত পাঁচ মাসেও সেচ কমিটির অনুষ্ঠিত সভার রেজুলেশনে স্বারক নম্বর না বসিয়ে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময় বাতিলকৃত আবেদন থেকে ৭১টি আবেদনকে সেচ লাইসেন্স দিতে মরিয়া হয়ে উঠে চক্রটি বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তেলিপাড়া, কিশোরপুর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম সেচ লাইসেন্সের অনুমোদন পান। তার লাইসেন্স নং ১১৮৫। কিন্তু এর ঠিক এক বছর পর টাকার বিনিময় অসাদু কর্মকর্তার যোগসাজসে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর একই লাইসেন্স নম্বর দিয়ে সেচ লাইসেন্সের অনুমোদন পান বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের আঠারো পাইকা গ্রামের সাব মিয়াকে।
এদিকে, গত বছর নিজস্ব জমি না থাকার কারণে সেচ লাইসেন্স পাননি ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের মালতিবাড়ি দিঘর গ্রামের আশরাফুল ইসলাম। নিজস্ব জমি জমা না থাকলেও সিন্ডিকেট চক্রের হাতে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দিয়ে লাইসেন্সের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন আশরাফুল। এভাবেই অনেক প্রকৃত কৃষক সেচের জন্য আবেদন করে লাইসেন্স না পেলেও অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে অনেকে হয়েছেন সেচের মালিক।
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ২০১৮সালে সেচ লাইসেন্স পেয়েছি। বর্তমানে আমি জানতে পারি আমার লাইসেন্স দিয়ে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সাব মিয়া নামে এক ব্যক্তি ব্যবহার করছে অবৈধভাবে। এটা কিভাবে সম্ভব।
তবে সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য খলিলুর রহমানের হাতে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে সেচ লাইসেন্স এবং সংযোগ নিয়েছেন বলে জানান সাব মিয়া। জালিয়াতির মাধ্যমে সেচ লাইসেন্স ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার প্রতিবাদে সাব মিয়ার বিরুদ্ধে আঠারো পাইকা গ্রামের আবু সাঈদ নামের এক সেচ মালিক উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু অভিযোগের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কার্যকরি কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।
আশরাফুল ইসলাম তার নামে কোন জমি নেই স্বীকার করে বলেন, আমার মায়ের নামে জমি রয়েছে। তা দিয়েই আমি সেচ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের জানজায়গীর গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন, কাশিয়াগাড়ি গ্রামের জাহেদুল খন্দকারসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, অবৈধ লাইসেন্স এবং সংযোগ দেয়ার জন্য উপজেলায় একটি সিন্ডিকেট চক্র রয়েছে। তাদের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুত থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন লাখ-লাখ টাকার বিনিময় অবৈধভাবে সেচ লাইসেন্স এবং সংযোগ দিয়ে থাকে। এগুলো বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার মেলে না।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উপ-সহকারি কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র রায় বলেন,আশরাফুলের বিষয়ে লিখিত অভিযোগের তদন্ত চলছে। তবে সাব মিয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই তার। রেজুলেশনে স্বারক না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আমি মূল কপি না পাওয়ার কারণে রেজুলেশনে স্বারক লেখা হয়নি।
তবে একটি সিন্ডিকেট চক্রের তোড়জোড়ের স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচ কমিটির সভাপতি নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, যারা আবেদন করেছে মিটিং করে প্রাথমিক তদন্তে যাদের কাগজপত্র সঠিক ছিল তাদের লাইসেন্সের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যাদের আবেদন অসত্য ছিল তাদের আবেদন আমরা অবৈধ ঘোষণা করেছি। সেচ লাইসেন্সে কোন অনিয়ম বা অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সেগুলো বাতিল করারও সুযোগ আছে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/জুলাই/০৬/২১