।। জেলা প্রতিনিধি ।।
ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে শুরু করেছে। উত্তরের সীমান্তবর্তী এ জেলাসহ এর উজানে ভারতের বিভিন্ন অংশে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকায় স্বল্পমেয়াদী বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো’র নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে কিছুটা কমলেও ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সবকটি পয়েন্টে বাড়তে শুরু করেছে। সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার (কৃষি ও সিনপটিক) রাজারহাট, কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, বুধবার (৩০ জুন) সকাল ৬ পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ ভারি বৃষ্টিপাত চলমান থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বন্যার আশঙ্কার পাশাপাশি জেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলায় তিস্তার ভাঙনে ভিটেমাটি হারাচ্ছে একের পর এক পরিবার। গ্রামীণ সড়ক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ আবাদি জমি বিলিন হচ্ছে তিস্তার গর্ভে। ভাঙন প্রতিরোধে পাউবো কর্তৃপক্ষ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবে খুব একটা কাজে আসছে না। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে, জেলায় ২৫ টি পয়েন্টে নদী ভাঙন চলছে। এর মধ্যে দুই একটি পয়েন্ট বাদে বাকি অংশে তাদের ভাঙন প্রতিরোধমূলক কাজ চলছে।
পাউবো, কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে এই দুই নদ-নদী অববাহিকায় একটি স্বল্প মেয়াদী বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যার আগাম পূর্বাভাসে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কোভিড ও বন্যা মোকাবিলায় প্রতি ইউনিয়নে প্রায় পৌনে চার লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা। এছাড়াও উপজেলাগুলোতে দুর্যোগকালীন সহায়তা হিসেবে ৩শ’৪৪ মেট্রিকটন চাল এবং প্রায় ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘জেলার দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন বিভাগগুলো প্রস্তুত থাকে। বন্যা পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বন্যা কবলিত মানুষদের উদ্ধার করে যেন আশ্রয়কেন্দ্রসহ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায় সে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।’
‘উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে পর্যাপ্ত চাল এবং টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে। আশা করি আগামী ১০-১৫ দিন কোনও সমস্যা হবে না।’ যোগ করেন জেলা প্রশাসক।
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//চন্দন/জুন/৩০/২১