।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরের রাহেনা বেগম ১৯৯০ সালে কৃষ্ণ মঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসাবে চাকুরিতে যোগদান করেন। শিক্ষকতা জীবনে স্কুল থেকে ফিরে বাড়ীতে একা একা সময় কাটতো তার। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য পাশের বাড়ী থেকে গাভীর দুধ রোজ নিতেন। ঠিক তখন থেকেই ভাবেন আমি নিজেই গাভী পালন করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে পারি।
১৯৯৩ সালে বিয়েতে উপহার পাওয়া স্বর্ণের আংটি বিক্রয় করে ১ হাজার ২’শ টকা দিয়ে একটি গাভী কেনেন তিনি। সেই থেকে যাত্রা শুরু হয় গরু পালনের।
প্রায় ২৮ বছর আগের কথা শখ থেকে নেশা, আর সেই নেশা থেকেই পরবর্তীতে স্কুল শিক্ষকের পাশাপাশি নিজ কর্মদক্ষতার কারণে আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। প্রায় ৮০ লাখ টাকার মূল্যের ৫২ টি গরুর মালিক। উলিপুুর পৌরসভার নারিকেল বাড়ী শঠিবাড়ী এলাকায় রাহেনা বেগমের খামার ঘুরে এ তথ্য জানা যায়।
সরেজমিনে, রাহেনা বেগমের খামারে গিয়ে দেখা যায়, ২ একর ৮১ শতাংশ জমির উপর বিস্তীর্ণ বাড়ীর চারপাশেই খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। চারটি সেডে সারি সারি বাঁধা রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতের গাভী, ষাড় ও বাছুর। বর্তমানে খামারে সবমিলিয়ে বিভিন্ন প্রজাতের ৫২ টি গরু। সেগুলোকে বেশ যতেœ রাখা হয়েছে যাতে রোগবালাই আক্রমন না করতে পারে। গরু পালনের পাশাপাশি ২৩ টি ছাগল, ১২ টি রাজহাঁস, ৫০ টি দেশী মুরগী ও ২৫-৩০ জোড়া কবুতর পালন করছেন। এছাড়াও ১ একর ৮০ শতাংশ পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতের মাছ চাষ করে আরও বড় পরিসরে খামার বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন রাহেনা।তিনি শুধু নিজেই সফল হননি। তার খামারে ৮ জন হত দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তাদের প্রত্যকের ১০ হাজার টাকা মাসিক বেতন।
সফল উদ্যোক্তা রাহেনা বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে বিয়ের উপহারের একটি আংটি বিক্রি করে প্রতিবেশির কাছে ১ হাজার ২’শ টাকায় একটি গাভী কেনেন। এরপর প্রতিবছর একটি করে বাছুর আসে তার গোয়াল ঘরে। পরে ২০০৩ সালে আশা এনজিও‘র কাছ থেকে ১লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দ’ুটি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী কেনেন তিনি। এর পরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ধীরে ধীরে তার খামার বড় হতে থাকে। বর্তমানে খামারে প্রতিদিন ১৬ টি গাভী দুধ দেয় ১৪৫-১৫০ লিটার , যা থেকে প্রায় ৭ হাজার টাকা দৈনিক আয় তার। এছাড়াও খামারে প্রধান আয়ের উৎস হলো বাছুর। তিনি আরও অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বায়োগ্যাস প্লান করতে না পাড়ায় গোবর হারবেষ্ট করতে পারছেন না। ফলে প্রতি বছর পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর গোবর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে বড় ধরণের ঋণের সুযোগ থাকলে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন বলে জানান।
ব্যক্তিগত জীবনে রাহেনা বেগম দুই সন্তানের জননী। স্বামী সাবেক প্রকৌশলী আজিজুল হক। মেয়ে আজিজা সুলতানা আঁখি ডেন্টাল সার্জন, ছেলে রাকিবুল ইসলাম ইমরান বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছেলে আইটিতে লেখা পড়া করলেও মায়ের গড়া খামারে তিনি মাকে নিয়মিতভাবে সহযোগিতা করেন।
নিজের খামারের উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি গ্রামের নারীদের উন্নয়নে খামার করার পরামর্শ দিয়ে উদ্ধুদ্ধ করেন। পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি, পরিশ্রম আর লক্ষ্য থাকলে মানুষ ঠিকই একদিন সফলতার দাড়প্রান্তে পৌঁছিতে পারবে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ আব্দুল আজিজ প্রধান বলেন, রাহেনা বেগমকে আমরা সার্বক্ষনিক কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছি। তার খামারটি রেজিষ্ট্রেশন ভুক্ত। এছাড়া বিভিন্ন সুযোগ সুবিধায় আমরা তাকে সাপোর্ট করি। সরকারি কোন বড় ধরনের সুযোগ আসলে তাকে দেয়ার চেষ্টা করবো।##
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/জুন/২৯/২১