।। জেলা প্রতিনিধি ।।
কুড়িগ্রামে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উত্তারাঞ্চলীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ। সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া তিস্তা ও ব্রম্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙ্গনে মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, আবাদীজমিসহ ব্যাপক এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কয়েক শত মানুষ তাদের জমি হারিয়ে পথে বসছে। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীদের অদূরদর্শীতা ও সঠিক সময়ে পরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ না করায় চোখের সামনে স্থাপনাসহ হাজার হাজার হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
এ রকম নাজুক পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুপুরে আকস্মিক নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন উত্তরাঞ্চলীয় পাউবোর’ প্রধান প্রকৌশলী। তিনি জেলার রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাটে ক্ষতিগ্রস্থ টি বাঁধ এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ও সদর উপজেলার মোগলবাসায় ধরলার নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। মোগল বাসায় ধরলার ভাঙ্গন রোধে চলমান প্রকল্পের কাজও তিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, এসব কাজ বিলম্বে শুরুর কারণে বর্ষা চলে এসেছে। বর্ষার মধ্যে এসব কাজে ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ থাকায় ঠিকাদাররা ইচ্ছা করেই কাজে বিলম্ব করছে। তিস্তা অববাহিকার নজরুল ও সুরুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী এবং প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এলাকায় এলে স্থানীয় মানুষজন যাতে তাদের সাথে কথা বলতে না পারে সেজন্য নানা রকম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখেন স্থানীয় প্রকৌশলীরা। ফলে মাঠ পর্যায়ে চলমান কাজে দূর্নীতির চিত্র অন্ধকারেই থেকে যায়। আর এর খেসারত দিতে হয় নদীর পারের মানুষকে। তাদের অভিযোগ এক থেকে দেড় মাস আগে পাউবো পদক্ষেপ নিলে কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা জেলার সীমানা লাগোয়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লকিয়ার পাড় গ্রামের শতাধিক বাড়ি ও উলিপুর উপজেলার পশ্চিম বজরা,চর বজরা, রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকাসহ তিস্তা তীরবর্তী হাজার হাজার একর জমি, স্থাপনাসহ তিন শতাধিক বাড়ি রক্ষা পেত। এখন এসব এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন রোধে জিওটেক্সটাইল ব্যাগ নিক্ষেপের হিসাব- নিকাশে ঠিকাদারের সাথে বড় ধরনের দূর্নীতির আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ দূর্নীতির সাথে পাউবোর মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে দাবী তাদের। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় উত্তরাঞ্চল প্রকৌশলীর পরিদর্শনকালে তার সাথে ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুস শহীদ, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগন।
পরিদর্শনকালে উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানান, কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় স্থায়ী ভাঙ্গন রোধে ১৪শ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। আরো প্রায় ৬শ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাশের অপেক্ষায় আছে, যা পাশ হলে দুধকুমরের স্থায়ী ভাঙ্গন রোধে কাজ করা হবে। সবমিলে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ জেলার নদ-নদীর ভাঙ্গন রোধের উদ্যোগ নিয়েছেন। এসব প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে নদী ভাঙ্গন ও বন্যার হাত থেকে এ জেলার মানুষ রক্ষা পাবে। এছাড়াও আসন্ন বন্যা মোকাবেলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তুতি রয়েছে। জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যা চলাকালীন সময়ে যখন যেখানে প্রয়োজন হবে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//সুভাষ/জুন/১৫/২১