।। জেলা প্রতিনিধি ।।
কুড়িগ্রামে মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলাফেরার প্রবণতা বেড়ে চলার সাথে তাল মিলিয়ে করোনা সংক্রমনের মাত্রা বেড়েই চলছে। গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ মাত্রা গত ছয় মাসের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং সরকারি কিংবা বেসরকারি অফিসগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি ছাড়াই মিলছে কাক্সিক্ষত সেবা। বিভিন্ন গণপরিবহন, সড়ক কিংবা বাজারে মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করছে মানুষ। এমতাবস্থায় জেলার সংক্রমিত এলাকা ম্যাপিং করে সংক্রমন বিবেচনায় জোন ভিত্তিক লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম এই তথ্য জানিয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত এক সপ্তাহে (৫ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত) জেলায় ১৭৯ টি নমুনা পরীক্ষায় ৭০ জনের দেহে করোনা সনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে গত ১২ জুন ১৮ জনের দেহে করোনার উপস্থিতি সনাক্ত হয় যা গত ছয় মাসে সর্বোচ্চ। এ অবস্থায় সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগ আরও জানায়, জেলার সদর উপজেলায় সংক্রমণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৭০ জনের মধ্যে ৫৩ জনই সদর উপজেলার বাসিন্দা।
এদিকে জেলা শহরের ব্যাংকসহ বিভিন্ন আফিস ও বিপণিবিতানগুলোতে দেখা গেছে, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বিভিন্ন ধরণের সেবা গ্রহণ করছেন। সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, বেশির ভাগ মানুষকে মাস্ক পরিধান ছাড়াই ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। একই অবস্থা গণপরিবহনসহ ছোট যাত্রীবাহী যানগুলোতেও।
জেলায় সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন। সংক্রমন বিবেচনায় জেলার বিভিন্ন এলাকা ম্যাপিংয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই দুই বিভাগ।
সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ করোনা থেকে বাঁচতে হলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাস্ক পরিধানের কোনও বিকল্প নেই। সংক্রমনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আমরা আগামীকাল (১৪ জুন) জরুরী মিটিংয়ে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, জেলা থেকে ছেড়ে যাওয়া পরিবহণের সংখ্যা ও গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহনসহ স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মালিক সমিতিকেও এ ব্যাপারে সহায়তা করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন মার্কেটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন,‘ জেলায় করোনা সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় আমরা ম্যাপিংয়ের কাজ শুরু করেছি। জেলার কোন অঞ্চলগুলোতে সংক্রমণের মাত্রা বেশি সেটা নির্ণয় করে আমরা জোন ভিত্তিক পৃথক পৃথক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী দুই একদিনের মধ্যে জেলা করোনা সংক্রান্ত কমিটির মিটিং করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
‘পুরো শহর বা জেলা লকডাউন করে কার্যকর করতে না পারলে লাকডাউন করে লাভ হবে না। লকডাউন বাস্তবায়নটা জরুরী। যে পাড়ায় বা যে এরিয়ায় সংক্রমন বেশি সেই পাড়া বা এরিয়া আমরা সেপারেটলি লকডাউন করবো। অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির বাড়িগুলো আমরা রেসটিকটেড করে দেবো। আমরা তাদের অনুরোধ করবো যেন তারা আইসোলেশনে থাকেন। আমরা ম্যাপিং করছি, কোন কোন জায়গাগুলোতে সংক্রমন বেশি সেই জায়গাগুলোতে খন্ড খন্ড ভাবে লকডাউন করার চিন্তা ভাবনা চলছে।’ যোগ করেন জেলা প্রশাসক।
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//চন্দন/জুন/১৩/২১