।। জেলা প্রতিনিধি ।।
দুর্বৃত্তদের হামলায় ডান হাতের কব্জি হারানোসহ গুরুতর জখম কলেজ শিক্ষক ও কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আতাউর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান আসামি ‘হাতকাটা’ বাঁধন এবং তার অন্যতম সহযোগী রশিদ মিয়া ও মাজহারুল ইসলাম মনোয়ারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৪ এপ্রিল) ঢাকা ও কুড়িগ্রামে এদের গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দা জান্নাত আরা নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি অবহিত করেন।
এসপি জানান, ঘটনার পর থেকেই আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্দু আসামিরা অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির হওয়ায় তারা বারবার স্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছিল। অবশেষে বুধবার (১৪ এপ্রিল) কুড়িগ্রাম পুলিশের একটি দল ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার একটি বাসা থেকে হামলার প্রধান আসামি মেহেদী হাসান বাঁধন ওরফে ‘হাতকাটা’ বাঁধন এবং তার অন্যতম সহযোগী রশিদ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কাঁঠালবাড়ী এলাকার আধারাম খোলারপাড় গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মাজহারুল ইসলাম মনোয়ার নামে তাদের আরও এক সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।
মেহেদী হাসান বাঁধন জেলার সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম এলাকার মুকুল মিয়ার ছেলে। তার মা মর্জিনা বেগম ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত (১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ড) নারী ইউপি সদস্য। আর রশিদ মিয়া একই ইউনিয়নের তালুক তালোয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। আর মনোয়ার কাঁঠালবাড়ী এলাকার আধারাম খোলারপাড় গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। গত ১৬ মার্চ ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলার পর থেকে এরা পলাতক ছিলেন। এলাকায় এরা ‘হাতকাটা’ বাহিনী হিসেবে পরিচিত।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এর আগে আল-আমিন আহমেদ শুভ নামে এই মামলায় আরও এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে কুড়িগ্রাম পৌরসভা এলাকার বকসী পাড়ার আব্দুল আজিজ দুলালের ছেলে। শুভ এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও গ্রেফতারের পর সে নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে। অন্যান্য আসামিদেরও গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা শহরের মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান মিন্টু গত ১৬ মার্চ দুপুরে জেলার রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের পালপাড়া এলাকায় আগে থেকে ওত পেতে থাকা কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক হামলার শিকার হন। এতে তার ডান হাতের কবজি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অপর হাত ও দুই পা গুরুতর জখম হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে ( পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা মেহেদী হাসান বাঁধনসহ ছয়জন জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। পরে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) মিন্টুর বাবা আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে রাজারহাট থানায় বাঁধনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আতাউর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলীর আপন ভাগিনা। আর বাঁধন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন গ্রুপের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। কাঁঠালবাড়ী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধও রয়েছে।
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//চন্দন/এপ্রিল/১৫/২১