।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষ ছাড়া ঐ অফিসে কোন কাজ হয় না। এ ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে ভুক্তভোগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রংপুর বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক ও মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ওই কর্মকর্তার পক্ষে রিপোর্ট দিলে অভিযোগকারীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন রংপুর জেলা সমন্বিত উপ-পরিচালক ওই কর্মকর্তার দুর্নীতির তদন্ত করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান ২ আগষ্ট/১৮ইং এ অফিসে যোগদান করেন। এরপর থেকেই তিনি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। টাকা ছাড়া তার অফিসে কোন কাজ হয়না। তিনি জিপিএফ হিসাব নম্বর খোলা, বেতন নির্ধারণ, বকেয়া বিল, জিপিএ চূড়ান্ত বিলসহ কোনকিছুই মোটা অংকের উৎকোচ ছাড়া স্বাক্ষর করেন না। গত বছরের জুন/২০ ইং শিক্ষকদের বিভিন্ন বিল পাস করতে নানা অজুহাতে তিনি টাকা আদায় করেন। সেপ্টেম্বর মাসে ২৮জন শিক্ষকের চাকরি বহি ডিপিএড বেতন নির্ধারণের জন্য জমা দেন কিন্তু উৎকোচ না দেওয়ার দীর্ঘদিন পর ওই চাকরি বহি ফেরত দেন। এর আগে জাতীয়করণকৃত ২১জন শিক্ষক গেজেট ভুক্ত হলে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের বিল পাশ করেন। কিন্তু চাকরি বহি বেতন নির্ধারণীতে স্বাক্ষর করে দীর্ঘদিন ঘুরিয়ে তা ফেরত দেন।
উপজেলার ২’শ ৪৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিলপ্রতি ৫’শ করে টাকা দাবি করেন। ওই টাকা না পেলে আগামী জুন মাসে বুঝতে পারবেন বলেও শিক্ষকদের হুমকি দেন।
এছাড়া পেনশন ও আনুতোষিক বিলে ১৫ থেকে ২০ হাজার করে টাকা নেয়ার পরও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ উপজেলার শিক্ষকরা খুবই খারাপ। আমার পূর্বের স্টেশন জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় একাজে ৩০ থেকে ৪০ হাজার করে টাকা পাওয়া যেত। এসব অভিযোগ এনে উপজেলার ২৬৮ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গত ২৮ জানুয়ারী/২০ ইং উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে রংপুর বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক ও মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেন। মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক তদন্তের জন্য গত ৬ ফেব্রুয়ারী/২০ ইং উপ-হিসাব নিয়ন্ত্রক এ কে এম অহিদুজ্জামান (আইসিইউ ও পরিদর্শন) কে দায়িত্ব দেন। তিনি তদন্ত করে ওই কর্মকর্তার পক্ষে রিপোর্ট দিলে অভিযোগকারীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অপরদিকে উত্তর নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ইশরত জাহান গত ১৫ জানুয়ারী হতে ২১ জানুয়ারী/২০ ইং পর্যন্ত ৭ দিনের চিকিৎসা ছুটি মঞ্জুর করে ১৩ হাজার ৭’শ টাকার বেতন গত ৫ মে/২০ ইং তৎকালিন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক শাহ্ স্বাক্ষর করে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেন। এরপর ১৮ মে ওই অফিসের অডিটর স্বাক্ষর করে কালক্ষেপণ শুরু করেন। এরপর কোন মন্তব্য ছাড়াই প্রায় এক বছর দুই মাস পর বিলটি ফেরৎ দেন। বিলটি পাশ না হওয়ার কারণে আজবধি শিক্ষক ইশরত জাহান ওই মাসের বাকি দিনেরও বেতন পাননি।
এদিকে গত ১৫ নভেম্বর/২০ ইং ওই কর্মকর্তার দুর্নীতির তদন্ত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন রংপুর জেলা সমন্বিত উপ-পরিচালক মোঃ নূর আলম।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উপ-হিসাব নিয়ন্ত্রক এ কে এম অহিদুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে তদন্ত করেছি। অভিযোগের সত্যতা পাইনি। প্রতিবেদন দাখিল করেছি।
দুর্নীতি দমন কমিশন রংপুর জেলা সমন্বিত উপ-পরিচালক মোঃ নূর আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের অভিযোগ ছাড়াও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/মার্চ/২১/২১