।। জেলা প্রতিনিধি ।।
দুর্বৃত্তদের হামলায় ডান হাতের কব্জি হারানোসহ গুরুতর জখম কলেজ শিক্ষক ও ছাত্র লীগের সাবেক নেতা আতাউর রহমান মিন্টু জীবননাশের আশঙ্কায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ তিনি এই জিডি করেন। আহত ছাত্রলীগ নেতার পরিবার ও সদর থানার একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে পূর্ব বিরোধের জেরেই মিন্টুর ওপর হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকটি সূত্র।
কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা শহরের মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান মিন্টু গতকাল (১৬ মার্চ) দুপুরে জেলার রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের পালপাড়া এলাকায় আগে থেকে ওত পেতে থাকা কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক হামলার শিকার হন। এতে তার ডান হাতের কব্জি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়াও তার অপর হাত ও দুই পায়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করেন চিকিৎসকরা।
কুড়িগ্রাম সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, বাড়িতে হামলাসহ জীবননাশের আশঙ্কায় আতাউর রহমান মিন্টু চলতি বছর জানুয়ারি মাসে থানায় একটি জিডি করেছিলেন। জিডি নং-১২৮৭। ওই জিডিতে তিনি কাঁঠালবাড়ী বাজার এলাকার বাসিন্দা বাঁধন, রশীদ ও শামীমসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়াসহ বাড়িতে হামলার আশঙ্কা করে অভিযোগ করেন। এ নিয়ে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থাও নিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকটি সূত্র বলছে, পূর্ব বিরোধের জেরেই মিন্টুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঁঠালবাড়ী এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাঁঠালবাড়ী এলাকায় বাঁধনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথায় গুরুতর জখম হয় বাঁধনের। ওই ঘটনায় বিএনপি দলীয় স্থানীয় এক নেতাসহ মিন্টুর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সেই হামলার ঘটনায় হওয়া মামলার হুকুমের আসামি মিন্টু।
স্থানীয়রা আরও জানান, আতাউর রহমান মিন্টু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলীর আপন ভাগিনা। আর বাঁধন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন মঞ্জু গ্রুপের রাজনীতির সাথে জড়িত। কাঁঠালবাড়ী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধও রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) মিন্টুর ওপর হামলাকারীদের মধ্যে বাঁধন নামে এক যুবক ছিলেন বলে জানিয়েছেন মিন্টুর সাথে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া রাজু নামে তার এক সঙ্গী। মিন্টুর বরাত দিয়ে রাজু জানান, ঘটনাস্থলে বাঁধনসহ ছয়জন আগে থেকে ওত পেতে ছিল। মোটরসাইকেলে করে আনিছ নামে এক যুবকসহ মিন্টু ছিনাইয়ের পালপাড়া এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলে থাকা অবস্থাতেই মিন্টুর ডান হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারেন বাঁধন। এতে মিন্টুর ডান হাতের কব্জি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এসময় আনিছ পালিয়ে গেলেও মিন্টুকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে সন্ত্রাসীরা। এতে মিন্টু মোটর সাইকেল থেকে পরে রাস্তার পাশে একটি খাদে পরে যান। এতেও ক্ষান্ত হয়নি সন্ত্রাসীরা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মিন্টুর দুই হাত ও দুই পায়ে কোপাতে থাকে তারা। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সন্ত্রাসীরা।
রাজু বলেন, ‘ গুরুতর আহত মিন্টু তার ওপর হামলাকারীদের চিনতে পেরেছে। সে তার স্বজনদের কাছে হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে বর্তমানে তার জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।’
ঘটনার পর থেকে বাঁধন পলাতক রয়েছে। তবে বাঁধনের মা ও কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য (১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ড) মর্জিনা বেগমের দাবি, তার ছেলে এ ঘটনায় জড়িত নন। তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
মর্জিনা বেগম বলেন,‘ বাঁধন এ ঘটনায় জড়িত নয়। যে সময় হামলার ঘটনা ঘটেছে তখন বাঁধন বাড়িতে ছিল। সে ওই সময় গোছল করতে ছিল। অনেকে বাড়িতে এসে তাকে দেখেছে।’ তবে হামলার ঘটনায় বাঁধনের নাম আসার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে বলে জানান এই ইউপি সদস্য।
এদিকে পুলিশ এই হামলাকে রাজনৈতিক বিরোধ কিংবা অন্য কোনও শিরোনাম দিতে নারাজ। এই হামলাকে একটি অমানবিক ও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবেই দেখছে পুলিশ।
কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার জানান, ‘পূর্ব বিরোধের জেরেই মিন্টুর ওপর হামলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও মামলা না হলেও আমরা ইতোমধ্যে কয়েকজন হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাদের গ্রেফতারে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।’
ঘটনাস্থল রাজারহাট থানাধীন হওয়ায় ওই থানা পুলিশও ঘটনার তদন্তে মাঠে কাজ করছে।
রাজারহাট থানার ওসি রাজু সরকার জানান, এ ধরণের হামলা অত্যন্ত অমানবিক। আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় অস্ত্রসহ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তির পক্ষ থেকে এখনও থানায় মামলা হয়নি। মামলা হলে এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) উৎপল কুমার রায় বলেন, ‘একটি ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। আমরা এটি অপরাধ হিসেবেই দেখছি এবং ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি।’
মিন্টুর করা জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই জিডি নিয়ে ইতোমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারপরও আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। মামলা হলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//চন্দন/মার্চ/১৭/২১