।। জেলা প্রতিনিধি ।।
করোনা ভাইরাস সংক্রামণ প্রতিরোধে সব ধরণের জমায়েত, সভা-সমাবেশ আয়োজন অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধের মধ্যেই তিন দিন ব্যাপী ইজতেমার প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি, কুড়িগ্রাম জেলা শাখা। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে করোনা পরিস্থিতিতে সকল ধরণের গণজমায়েত অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধের নির্দেশ থাকায় আয়োজকদের ইজতেমা অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আগামী ১১মার্চ থেকে ১৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত কুড়িগ্রাম সদরের ধরলা ব্রিজের পূর্বপাড়ে ফজলুল করীম (রহ:) জামিয়া ইসলামীয়া ময়দানে তিনদিন ব্যাপী এ ইজতেমার প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি।
এদিকে ইজতেমা আয়োজনে আয়োজকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৯মার্চ) জেলা প্রশাসনের জুডিসিয়াল মুন্সিখানা শাখা থেকে এক পত্রের মাধমে ইজতেমা আয়োজনের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আমিনুল ইসলাম বুলবুল স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ , মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা হতে প্রাপ্ত ৩০ জুন ২০২০ খ্রিঃ তারিখের ১২৩ নং পত্রে করােনা ভাইরাস ( কোভিড -১৯ ) এর কারণে সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত অনুষ্ঠান আয়ােজন বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। উক্ত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে এ কার্যালয়ে ২০ জুলাই ২০২০ খ্রিঃ তারিখের ৪৬৭ নং স্মারকে সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়ােজন বন্ধ রাখার বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারী করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রদত্ত নির্দেশনার আলােকে তার (আবেদনকারীর) দাখিলকৃত আবেদনটি নামঞ্জুর করা হলো।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইজতেমা প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায় প্রস্তুতি প্রায় শেষের পর্যায়ে রয়েছে। শেষ মহূর্তের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সেচ্ছাসেবীরা। ইতোমধ্যে কিছু মুসল্লী তাবু টেনে রাত্রী যাপন শুরু করেছেন। প্রশাসনের অনুমতি না মেলার খবরে আয়োজকরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জনাব মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, অনুমতির জন্য ১মাস আগে আবেদন দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসন ‘মৌখিকভাবে অনুমতি’ দিয়েছে ‘আশ্বস্ত’ করেছে। আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন যদি কোন ব্যাত্যয় ঘটে তাহলে সবার কাছে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হবো।
ইজতেমা ইনতেজামিয়া কমিটির আহ্বায়ক মোখছেদুর রহমান জানান, প্রায় একমাস আগে জেলা প্রশসনকে অবগতি পত্র দিয়ে ইজতেমার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। আজ (৯ মার্চ) আমরা অনুমতি না মেলার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে আমরা বুধবার (১০ মার্চ) জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আবারও সাক্ষাত করবো। আশা করছি শেষ পর্যন্ত অনুমতি মিলবে।
প্রতিবছর বড় পরিসরে ইজতেমার আয়োজন করা হলেও এবছর পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমিত আকারে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান আয়োজক কমিটির এই আহ্বায়ক।
তবে জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, ‘তারা একমাস আগে আবেদন করলেও আমরা কোনও ভাবেই সম্মতি দেইনি। আমি তাদের বারবার বলেছি এটা অনুমতি দেওয়ার কোনও সুযোগ নাই। চলমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক সকল ধরণের গণজমায়েত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে আয়োজকদের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।’
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘মৌখিক সম্মতি’ দেওয়া হয়েছে, আয়োজকদের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন,’ আমরা বলেছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা বিবেচনা করবো। কিন্তু পরিস্থিতিতো স্বাভাবিক হয়নি। ইতোমধ্যে সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।’
ইজতেমা আয়োজনে জেলা প্রশাসনের অনমুতি না দেওয়ার বিষয়টি অবগত রয়েছেন জানিয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) খান মো.শাহরিয়ার জানান, চিঠির অনুলিপি পাওয়ার পর আমরা আয়োজকদের সাথে দেখা করে অনুমতি ছাড়া ইজতেমা অনুষ্ঠান না করার নির্দেশনা দিয়েছি। এ নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে যেন কোনও ধর্মীয় অসন্তোষ দেখা না দেয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমরা তাদের বলেছি। আশা করছি তারা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আয়োজন স্থগিত করবেন।
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//চন্দন/মার্চ/১০/২১