।। আব্দুল মালেক ।।
উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকার হতদরিদ্র খলিল মন্ডল (৪৮)। ভিটে মাটি বলতে কিছুই নেই তার। গত ৯ বছর পুর্বে আশ্রয় হয়েছে ওই ইউনিয়নের ফকির মোহাম্মদ এলাকার একটি গুচ্ছ গ্রামে। আগে দিনমজুরী করে সংসার চালালেও এখন শারীরিক অক্ষমতার কারণে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। স্ত্রী মর্জিনা বেগম শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন কাজ করতে পারেন না। ফলে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে পরিবারটির। এমতাবস্থায় ৭ সন্তান নিয়ে দিশেহারা বাবা-মা। গত এ সপ্তাহ আগে অভাবের তাড়নায় ৩মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তানকে ১০হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তারা। এর আগেও প্রায় ১৬ মাস পুর্বে ২দিন বয়সী একটি শিশু কন্যাকে বিক্রি করেন এই দম্প্রতি। কিন্তু সেই সময় টাকার বিনিময়ে বিক্রি করলেও পরে তারা কোন টাকা পাননি।
ভুক্তভোগি পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, খেয়ে না খেয়ে থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোন সাহায্য সহযোগিতা করেনি। সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা।
সরেজমিনে রবিবার (ফেব্রুয়ারি ২৮) ওই এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারটির সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১৮ বছর আগে বিয়ে হয় খলিল মন্ডল ও মর্জিনা বেগমের। ভিটে মাটি না থাকায় আশ্রয় হয় উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকির মোহাম্মদ গুচ্ছ গ্রামের একটি খুঁপড়ি ঘরে। স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কোন রকমে গাদাগাদি করে থাকতেন তারা। আয় রোজগার না থাকায় অভাবের সংসারে এতগুলো সন্তানের মুখে আহার জোটানো খলিল মন্ডলের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। কোনদিন একবেলা আবার কোনদিন না খেয়েই স্ত্রী সন্তান নিয়ে দিন কাটে তার। প্রথম সন্তান কলিমা খাতুন (১২) মাসিক ২হাজার টাকা বেতনে রংপুরের একটি বাসায় ঝিঁয়ের কাজ করছিলেন। বয়স কম হওয়ায় কাজ করতে না পাড়ায় বাড়ীতে ফিরে আসেন। দ্বিতীয় সন্তান কলিমউদ্দিন জন্মের ৩ মাসের মাথায় পুষ্টিহীনতায় মারা যায়। তৃতীয় সন্তান মিজানুর (৯), চতুর্থ সন্তান ইছানুর (৪) ও চতুর্থ সন্তান খুশি খাতুন (২) বাবা মার সাথেই থাকেন।
এদিকে অভাবের তাড়নায় ৩মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তানকে ১০হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তারা বিক্রি করে দেন বাবা-মা। এর আগেও প্রায় ১৬ মাস পুর্বে ২দিন বয়সী একটি কন্যা শিশুকে বিক্রি করেন এই দম্প্রতি।
আইয়ুব আলী, দেনছাড় আলী, হালিমা বেগমসহ একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, নদী ভাঙন কবলিত এ এলাকার অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। খলিল মন্ডল কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ও শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় কোন কাজ-কর্ম করতে পারেন না। খেয়ে না খেয়ে পড়ে থাকলেও কোন মেম্বার চেয়ারম্যান তাদের সাহায্য সহযোগিতা করেনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া। তিনি বলেন, খলিলকে সরকারিভাবে নানা সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগি মর্জিনা বেগম বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ, টেহা পইসে নেই। অভাবে ছাওয়া বিক্রি করছি। ছাওয়া বেঁচা টেহা দিয়ে মোর স্বামী চিকিৎসে করবের নাগছে। না খায়া পড়ি মরলেও কোন নিম্বর চেয়ারম্যান হামাক কিছু দেয় না’। তিনি আরো বলেন এরআগেও ২দিন বয়সী একটি শিশু কন্যাকে বিক্রি করেছেন তারা।
এবিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। এখন প্রতিবন্ধি ভাতা কার্ডে আওতাভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। তারা আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি তাদের প্রতিবন্ধি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। যেভাবে পারি পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/মার্চ/০১/২১