।। আব্দুল মালেক ।।
উলিপুর পৌর নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে আওয়ামী লীগ, তেমন সাড়া নেই বিএনপি’র। আগামী শনিবার (৩০ জানুয়ারি) উলিপুর পৌরসভায় পঞ্চম বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের শেষ দিকে জোরেশোরে চলছে প্রচার-প্রচারণা।
মেয়র, সাধারণ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে প্রচার-প্রচারণা ও সভা সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশশ্রুতি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। পৌর এলাকাজুড়ে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছে মাইকিং। প্রচারণায় গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকান সরগরম থাকছে সব সবসময়। ভোটকে কেন্দ্র করে পুরো পৌর এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
আওয়ামী লীগ দলীয় বিগত মেয়র মরহুম আব্দুল হামিদ সরকারের সময়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলেও তা মুখ থুবড়ে পড়ে বিএনপি দলীয় বর্তমান মেয়র তারিক আবুল আলার সময়ে। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব মামুন সরকার মিঠু উন্নয়নের ধারা রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রচারণায় ভোট প্রার্থনা করছেন। দিন-রাত গণসংযোগ, উঠান বৈঠক আর পথ সভার মাধ্যমে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে বিভিন্ন এলাকা। তারুন্য ও ক্লিন ইমেজ, বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকা ও জাতীয় পার্টি সমর্থন দেয়া এবং ৫টি ওয়ার্ড নিয়ে পশ্চিম এলাকায় তার বাড়ী হওয়ায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আলহাজ্ব মামুন সরকার মিঠু।
এবারে নির্বাচনে তার সমর্থনে কাজ করছেন, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ জাফর আলী, সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহাম্মেদ মন্জু, উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ভাইস চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সরকার সহ জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোট চাইছেন। বিশেষ করে পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রার্থীকে জয়ী করতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। সেই সঙ্গে পৌর শহরের উন্নয়নে এক জোট হয়ে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রকাশ্যে ভোট চাচ্ছেন নৌকার পক্ষে। এ সময় তারা তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়ন আর বিএনপি সমর্থিত বর্তমান মেয়র তারিক আবুল আলার বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি এবং বেহাল রাস্তা-ঘাটের চিত্র। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা নেত্রীরাও তাদের কর্মীদের নিয়ে ছুটছে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মেয়র প্রার্থী হাফেজ আতাউর রহমানের হাতপাখা মার্কার মাইকিং ও প্রচার চললেও ভোটারদের মাঝে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।
অপরদিকে মাইকিং প্রচারণা চললেও নিরবে চলছে ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারণা। বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হায়দার আলী মিঞার পক্ষে প্রকাশ্যে কোনো প্রচার প্রচারণা কিংবা গণসংযোগ তেমন চোখে পড়ছে না। উপজেলা পর্যায়ের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা ছাড়া বিপুলসংখ্যক নেতৃবৃন্দকে প্রচার কার্যক্রমে এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। তবে বিএনপির কর্মীরা নিরবে প্রচার কাজ করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।
চায়ের দোকান, আড্ডা, আলোচনায় একটাই প্রশ্ন বিএনপি একটি বড় দল সত্বেও প্রার্থীর প্রচারণা এবং নেতাকর্মীরা মাঠে নেই কেন? সচেতন মহলের দাবি বর্তমানে বিএনপির মেয়র তারিক আবুল আলা চৌধুরীর ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির কারণে তারা মাঠে নামতে পারছেন না। পোস্টার, মাইকিং, গণসংযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, উঠান বৈঠকসহ সব ক্ষেত্রেই নৌকার প্রচার চোখে পড়ার মতো। উলিপুর পৌর নির্বাচনকে ঘিরে অনুসন্ধান এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
খাওনার দরগাহ্ এলাকার সাদেকুর রহমান শহীদ নামে এক ভোটার বলেন, বিএনপির স্থানীয় প্রথম শ্রেণির নেতারা মাঠে নেই। প্রার্থীর প্রচারণাও কম। এমন অবস্থায় কোনো কর্মী প্রকাশ্যে প্রচার কাজে অংশ নিয়ে বিপাকে পড়তে চাচ্ছেন না।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। সেই সাথে আমাদের উপজেলায়ও যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে। শুধু উন্নয়ন হয়নি উলিপুর পৌরসভার। বিএনপির এই মেয়র উন্নয়নের সিংহভাগ টাকা লুটপাট করেছেন। দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং পৌরসভার উন্নয়নের স্বার্থে ভোটাররা এবার নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব মামুন সরকার মিঠু বলেন, আমার চাচা মরহুম আব্দুল হামিদ সরকার বিগত পাঁচ বছরে নাগরিক সেবাসহ যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আমি পৌর মেয়র নির্বাচিত হলে পৌরসভার রাস্তা ঘাট ব্রিজ কালভার্টৈর ব্যাপক উন্নয়ন করবো। নাগরিকসেবা জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেব। আমি গরিবের হক খেতে আসেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে জনগণের সেবা করে ভালোবাসা অর্জন করতে চাই। আশা করি পৌরবাসী আমাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করবেন ইনশাআল্লাহ্।
ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী হায়দার আলী মিঞার বলেন, নিরবে ভোট প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি পায়ে হেটে পৌর এলাকার ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছি। ভোটের মাঠ ভালো রয়েছে। জনগণও ভোটের অপেক্ষায় আছে। ধানের শীষেরই বিজয় হবে।
এবারের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ৫০ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদন্দিতা করছেন। তবে এখন পযর্ন্ত ভোটে মাঠে কোন প্রকার অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি। আগামী ৩০ জানুয়ারী উলিপুর পৌরসভায় ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ৩৭ হাজার ৯ শত ১৫ জন ভোটার রয়েছে।
উপজেলা সহকারি নির্বাচন অফিসার আহসান হাবীব বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য সার্বিক কার্যক্রম চলমান আছে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/জানুয়ারি/২৭/২১