।। সুভাষ চন্দ্র ।।
সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে নদীর তীর থেকে বালু উত্তোলন করায় রাজিবপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রাম এখন হুমকির মুখে রয়েছে। কতিপয় ব্যাক্তি প্রকাশ্যে বেআইনিভাবে বালু উত্তোলন করে রমরমা ব্যবসা করলেও স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে।
নদীবেষ্টিত রাজিবপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম ও সোনাভরি নদীর কিনারা দিয়ে অন্তত ২৫/৩০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছে কতিপয় প্রভাবশালী। এতে করে বেশ কয়েকটি গ্রাম কার্যত হুমকির মুখে পড়েছে। বেআইনিভাবে বালু উত্তোলন করে একটি প্রভাবশালী মহল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বালু বিক্রি করছে । এদিকে নদীর পারের মানুষ অভিযোগ করে বলেছে, বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে অসময়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদী শাসনে সরকার যখন হাজার হাজার কোটী টাকা খরচ করছে তখন এক শ্রেনীর বালু ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট ড্রেজার বসিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে নদী ভাঙ্গন তরান্নিত করছে। এঘটনায় স্থানীয়দের তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
মোহনগঞ্জের সোহরাব মোল্লা জানান, নদী তীরবর্তী মোহনগঞ্জ, চর নেওয়াজী, কোদালকাটি, বাউল পাড়া, বালিয়ামারী, রাজিবপুর মুন্সিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম এখন হুমকির মুখে।
ড্রেজার মালিক শামীম হোসেন জানান, রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল হাই সরকার আমাকে অনুমতি দিয়েছেন, শুধু তাই নয় তিনি বালু উত্তোলন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেছেন।
নদীর পারের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্ত জুড়ে দিয়ে এ প্রতিবেদককে জানান, উজ্জল হোসেন নামের এক ড্রেজার মেশিন মালিক ডাকাত দলের সদস্য। কেউ ড্রেজার সম্পর্কে কথা বলতে গেলে ডাকাতির ভয় দেখায়।
ড্রেজার মালিক মতিউর রহমান বলেন, প্রশাসনকে প্রতিমাসে তাদের চাহিদা মত টাকা দিতে হয়, টাকা দিলে সব চলে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল হাই সরকারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আমি উদ্বোধন করি নাই। তবে আমার একটি ড্রেজার মেশিন আছে যা সরকারী রাস্তার কাজে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক তৈরির কাজের জন্য প্রয়োজনী বালু উত্তোলন করে দিচ্ছি স্বীকার করেন।
কোবাদ আলী ও ছকমল সহ এলাকার লোকজন অভিযোগ করে বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে দফায় দফায় রাজিবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না তারা।
এ ব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম ফেরদৌস জানান, আমি ড্রেজার মেশিন চালানোর কোন অনুমতি দিইনি। কয়েকদিন আগে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা খালেকুজ্জামানকে পাঠিয়ে অবৈধ ড্রেজার বন্ধ করিয়েছিলাম। কাজের চাপে ওই এলাকায় যাওয়া হয়নি। তবে আমি দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম নদী শাসনের কাজ পরিদর্শনে এসে কয়েকটি ড্রেজার বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা আমলে নেননি ড্রেজার মালিকরা । বর্তমানে সেখানে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, কোন ড্রেজার মেশিনের অনুমতি আমার দেয়া নাই। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ মেশিন চালালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী নির্বাহী কর্মকর্তা শরবত দেখা হয় নাই নবীরুল ইসলাম জানান, কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//সুভাষ/জানুয়ারি/১৫/২১