।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসানো, সরকারি বরাদ্দসহ বিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এরই প্রেক্ষিতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ কেন বন্ধ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ কমিটি গঠন করে বিদ্যালয়ের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। নিরীক্ষণ কমিটি তদন্ত করে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার ও সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভুতভাবে বিদ্যালয়ের মাঠে গরু ছাগলের হাট, রেজিষ্টার ছাড়াই অর্থ ব্যয়, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, সরকারি বরাদ্দ ও বিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও নিরীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক হযরত আলী উপজেলা প্রশাসন এবং উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর অঞ্চল বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
হযরত আলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে উলিপুর উপজেলা প্রশাসন তদন্ত শুরু করলে তদন্ত কমিটিকে ওই প্রধান শিক্ষক অসহযোগীতা করেন। পরে উপজেলা প্রশাসন একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসন বরাবর প্রেরণ করেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ২০০৪ সালের ৫ নং আইন (দুর্নীতি দমন কমিশন আইন,২০০৪) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এর মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠান জেলা প্রশাসন।
এরপর উপ-পরিচালকের কার্যালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর অঞ্চলের দাপ্তরিক নির্দেশনায় তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পান সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষক তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্তে সহযোগীতা না করে সরকারি আদেশ অমান্য করে উল্টো তদন্তকারী কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। তদন্তকারী কর্মকর্তার সুপারিশের প্রেক্ষিতে ওই প্রধান শিক্ষকের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ কেন বন্ধ করা হবে না তার ব্যাখ্যা চেয়ে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরে দাখিলের জন্য নোটিশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ( মাউশি)। প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার জানান, তিনি এখনও নোটিশ পাইনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ্ মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় নতুন এসেছি। ওই প্রতিষ্ঠানের কিছু অনিয়মের কথা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত অধিদপ্তরের এরকম কোন চিঠি হাতে পাইনি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, কয়েকদফা তদন্তে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্তকালে প্রধান শিক্ষক সহযোগিতা না করে তদন্তটিমকে অবজ্ঞা করেন। ওই প্রধান শিক্ষক কাউকে পাত্তায় দেন না। একাধিকবার তার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, তদন্ত করা আমার কোন এখতিয়ার নেই মর্মে উল্টো তিনি আমাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। পরে একটি তদন্ত প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর অঞ্চল বরাবর দাখিল করি।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/জানুয়ারি/০৭/২১