।। আব্দুল মালেক ।।
নদী যোদ্ধাদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর প্রাণ ফিরে পেয়েছে মরা বুড়িতিস্তা। সেই সাথে ফিরে পেয়েছে তার হারানো যৌবন। কিন্তু সেটির স্থায়ীত্ব কতকাল? ধীরে ধীরে নানা কৌশলে বুড়িতিস্তাকে দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন একটি চক্র। যে যেভাবে পাচ্ছে বুড়িতিস্তাকে ব্যবহার করছে। তবে সূধিজনের অভিমত, এভাবে চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে বুড়িতিস্তা তার নাব্যতা হারিয়ে আবারো দখলদারদের কবলে চলে যাবে।
জানা গেছে, ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ারে নির্মিত স্লুইস গেটটি তিস্তা নদীর গর্ভে চলে যায়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিত ভাবে বুড়িতিস্তার উৎস মুখে বাঁধ নির্মাণ করেন। ফলে বুড়িতিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে, দখল আর দূষণে প্রমত্তা বুড়িতিস্তা মরা খালে পরিণত হয়। এরপর মরা বুড়িতিস্তার প্রাণ ফিরে পেতে উলিপুর প্রেসক্লাব এবং রেল, নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি ‘ বুড়িতিস্তা বাঁচাও- উলিপুর বাঁচাও’ আন্দোলন গড়ে তোলেন। নদীর উপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ফিরে পেতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন নদী যোদ্ধারা।
সরকার সারা দেশের ছোট নদী খননের উদ্যোগ নিলে ডেল্টা প্লানের মাধ্যমে বুড়িতিস্তা নদীকেও খনন প্রকল্পের আওতায় আনেন। প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছরের মার্চ মাসে ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৮০ ফুট প্রস্থ বুড়িতিস্তা নদীর খনন কাজ শুরু হলে যা গত বছরেই শেষ হয়। প্রাণ ফিরে পায় মরা বুড়িতিস্তা। কিন্ত সেই বুড়িতিস্তা নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আবারো দখলের পায়তারা করছেন একটি মহল।
সরিজমিনে, পৌর শহরের নারিকেল বাড়ি তেলিপাড়া,পাগলা কুড়া, কাজির চক, খামার, চরপাড়া এলাকার বুড়িতিস্তা পাড় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় নদীর পাড়ের অংশ কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। আবার কেউ পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে গেছে। নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ করে বাঁশ আর জালের ঘের দিয়ে মাছ চাষ করতেও দেখা গেছে। এভাবেই বুড়িতিস্তাকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বুড়িতিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, বুড়িতিস্তা নদীর গুনাইগাছ ব্রীজ পয়েন্টে আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
কাজির চক এলাকার বাসিন্দা মহসিন আলী বলেন, পুকুর শুকিয়ে গেছে। তাই বুড়িতিস্তা নদীতে ঘের দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
এসময় ওই এলাকার ফজল উদ্দিনকে নদীর পাড় কাটতে দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি (ফজল) কিছু না জানিয়ে পাশ কেটে চলে যান।
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এভাবে নদীর পাড় কাটলে বর্ষা মৌসুমে অনায়াসে লোকালয়ে পানি ঢুকে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। যে যার মত বুড়িতিস্তা নদীকে ব্যবহার করে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় নদী তার ফিরে পাওয়া ঐতিহ্য দ্রুত হারিয়ে ফেলবে।
রেল, নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির উলিপুর শাখার সভাপতি আপন আলমগীর বলেন, বুড়িতিস্তা নদীর পৌরসভার অংশটুকু অধিগ্রহন না থাকায় একটি চক্র আবারো নদী দখলে হীন অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা দুর করে বুড়িতিস্তাকে আপন গতিতে ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির কুড়িগ্রাম সভাপতি ও উলিপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরদার বলেন, এভাবে আবারো বুড়িতিস্তা দখল হতে থাকলে, সরকারের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, বুড়িতিস্তা নদীর পৌর এলাকায় অধিগ্রহনে আইনি জটিলতা থাকায় তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ নেই। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/জানুয়ারি/০২/২১