।। জেলা প্রতিনিধি ।।
রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ,উজানে জলাবদ্ধতা নিরসন, জেলে ও সাধারণ মানুষের জন্য উম্মুক্ত করণ, খনন, ইজারা বাতিল এবং সেতু বিহীন সড়কে সেতু স্থাপনের দাবীতে সমাবেশ করেছে চাকির পশার নদী সুরক্ষা কমিটি।
শনিবার (ডিসেম্বর ২৬) দুপুরে রাজারহাট রেল স্টেশনের সামনে চাকির পশার নদী সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়ক ড. তুহিন ওয়াদুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন তিস্তা বাঁচাও-নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী। “তিনি বলেন,নদী খনন ও পূনরুদ্ধার না করা হলে রংপুর বিভাগ আগামী ২০বছরের মধ্যে তলিয়ে যাবে,রংপুর কে বাঁচাতে হলে আন্দোলন চলমান রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, চাকির পশার নদী যদি ঠিক করা না যায়,তাহলে রাজারহাট তলিয়ে যাবে।”
চাকির পশার নদী সুরক্ষা কমিটির আহবায়ক খন্দকার আরিফের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, তিস্তা বাঁচাও,নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান শফি, গণকিমিটির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নাহিদ হাসান নলেজ, চাকির পশার নদী সুরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব তারেক আহমেদ প্রমূখ।
নাহিদ হাসান বলেন,“দখলদাররা বিভিন্ন সরকারি নাম ব্যবহার করে এই আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমরা মনে করি, এই আন্দোলনকে ব্যহত করার সাহস বা সুযোগ কারো নাই, জনগনের কোন আন্দোলনকে কেউ আটকাতে পারে না।”
চাকির পশার নদী সুরক্ষা কমিটির সমন্বায়ক ড.তুহিন ওয়াদুদ বলেন,“আমি এখানে দাড়িয়ে ঘোষনা দিতে চাকির পশার নদীতে এক ইঞ্চি দখলও থাকবে না, কোন অমৎস্যজীবি এখানে লিজ নিতে পারবে না। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনা না মানলে আইন লঙ্ঘন করা হবে। অনতিবিলম্বে এই নদীর সমস্ত অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে।”
চাকির পশার নদী সুরক্ষা কমিটির আহবায়ক খন্দকার আরিফ দাবী করেন,“সরকারিভাবে দখলদারের একটি তালিকায় ২২জনের নাম থাকলেও প্রকৃত পক্ষে দখলদারের সংখ্যা অনেক বেশী।”
তথ্য মতে, ১৯৪০সনের রেকর্ড অনুযায়ী চাকির পশার নদীর মোট জায়গা ছিল ৩০৬ একর জমি। কালের পরিক্রমায় নদীতে ভাটা পরার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় দখলদাররা নদীর বৃহতাংশ পাড় বেঁধে পুকুর তৈরী,রাস্তা তৈরী,ফসলী জমি বানিয়ে দখল করায় বর্তমানে নদীর মোট জমি রয়েছে মাত্র ১শ ৪১ দশমিক ২৯একর। ১৯৯৬ ইং সন থেকে এই জমি থেকে সরকারি ভাবে জলমহাল হিসেবে ইজারা দেয়া হচ্ছে।
সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯-এর ২(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,‘কোনো সমিতিতে যদি এমন কোন সদস্য থাকেন যিনি প্রকৃত মৎস্যজীবী নহেন তবে সে সমিতি কোনো সরকারি জলমহাল বন্দোবস্ত পাওয়ার যোগ্য হবে না।’ উল্লেখ থাকলেও চাকির পশার নদীতে এই আইন লঙ্ঘন করে অমৎস্যজীবিদের নামে লিজ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ২১নং ধারা অনুযায়ী,‘বন্দোবস্তকৃত/ইজারাকৃত জলমহালের কোথাও প্রবাহমান প্রাকৃতিক পানি আটকে রাখা যাবে না।’তবে চাকিরপশার নদীতে এই আইন অমান্য করে, উজান ও ভাটিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পানি প্রবাহে বাঁধাগ্রস্থ করা হচ্ছে।
গত ২বছর ধরে নদীটি দখলমুক্তের দাবী জানিয়ে আসছে চাকির পশার নদী সুরক্ষা কমিটি। বিভিন্ন সময় তারা নদী সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারক লিপি, সভা-সমাবেশ এবং জন সচেুতনতা সৃষ্টির লক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার এই কমিটি চাকির পশার নদী সংলগ্ন পাঠান হাট ঈদগাহ মাঠে জন সমাবেশের আয়োজন করে। পরে একই স্থানে আর একটি সংগঠন সমাবেশ আহবান করায় তারা স্থান পরিবর্তন করে রাজারহাট রেল স্টেশনের সামনে সমাবেশ করে।
এবিষয়ে রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ রাজু সরকার জানান, করোন কালিন পরিস্থিতিতে সভা-সমাবেশের নিয়ম নেই,ফলে উপজেলার পাঠানহাট ঈদগাহ মাঠে আমরা কাউকে সমাবেশ করার অনুমতি দেইনি।
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//চন্দন/ডিসেম্বর/২৬/২০