।। নিউজ ডেস্ক ।।
উত্তরের সীমান্তবর্তী দারিদ্র পীড়িত জেলা কুড়িগ্রাম। সরকার কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের খসড়া প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় অনুমোদন দিয়েছে। এতে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে জেলায়। খুশীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে কুড়িগ্রামবাসী।
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) মন্ত্রীসভার ভার্চুয়াল সভায় ‘ কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২০’ এর খসড়া অনুমোদন হয়েছে। তার প্রতিক্রিয়ায় জেলা জুড়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পেশাজীবীসহ বিশিষ্টজনরা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছেন। সামাজিক মাধ্যমে চলছে সরকার প্রধানকে নিয়ে বন্দনা।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সালমান দিদার জানান, ‘আমরা সত্যি উচ্ছ্বসিত। এটা জেলার জন্য অনন্য পাওয়া। এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়, জেলায় কৃষির আধুনিকায়ন, গবেষণা ও উন্নয়ন হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রাখবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বরাবরের মতো আবারও কুড়িগ্রামের মানুষের প্রতি আন্তরিকতার বহি:প্রকাশ ঘটালেন।’
ওই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ এটা জেলাবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত একটি পাওয়া। দেরিতে হলেও এই চাওয়ার বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটা জেনে আমিসহ জেলাবাসী সত্যি শিহরিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমরা কৃতজ্ঞ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি পড়ার সুযোগ পাচ্ছি না। তারপরও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম পড়তে পারবে। এটা ভেবেই ভালো লাগছে। কৃষিপ্রধান কুড়িগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যুগোপযোগী। এর ফলে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিকাশ ঘটবে। এলাকার কৃষির উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ ঘটবে।’
রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় এ জেলার মানুষের প্রাণের দাবি। আওয়ামী লীগ সরকার শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এ জেলার মানুষের স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত জেলার মানুষের দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সূচকে কুড়িগ্রাম জেলার গুরুত্ব বাড়বে।
সামাজিক সংগঠন গ্রিন ভয়েজের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোহন্ত বলেন, ‘কৃষি পৃথিবীর আদিম পেশা। কুড়িগ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জেলার কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুঘটকের কাজ করতে পারে। ভাবতেই ভালো লাগছে যে, এখন আমার জেলার কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে গবেষণা হতে পারে। আমরা সত্যি আনন্দিত। ’
জেলা শহরের ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেইন জানান, ‘এটা ভালো উদ্যোগ, আমরা আনন্দিত।’
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দুলাল বোস বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হলেও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ যে তিনি জেলাবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত একটি বাসনা পূরণ করতে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু লেখাপড়ার স্থান নয়, সেখানে গবেষণার পাশাপাশি নতুন কিছু উদ্ভাবনও হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে জেলায় বিভিন্ন বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। এতে জেলার অনেক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। আমরা চাই দ্রুত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শীঘ্রই এই বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করুক। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন সব ধরণের বিষয় অধ্যয়নের সুযোগ রাখা হয়।’
রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও সংগঠক নাহিদ হাসান বলেন, ‘কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। এটা আমাদের পরম পাওয়া। এই বিশ্ববিদ্যালয় তার কার্যক্রম চালু করলে জেলার সার্বিক চিত্রই পাল্টে যাবে। জেলার বিশাল চরাঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।’
শিক্ষাবিদ ও গবেষক আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘এই অনুমোদনের ফলে প্রমাণিত হলো যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামকে ঘিরে যে চিন্তা করেন। তিনি যে কথা দেন, তা তিনি বাস্তবায়ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা আমাদের জেলা আরও এগিয়ে যাবে।’
প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষি ভিত্তিক হলেও তাতে যেন সাধারণ বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়, এমন প্রস্তাবনা দিয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘এতে করে আমাদের পার্শ্ববর্তী জেলা ও সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলো থেকে অনেক শিক্ষার্থী এখানে শিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহী হবে। ফলে এটি একটি সার্বজনীন প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা নির্ধারণের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো রয়েছে এমন স্থান নির্বাচন করার পরামর্শ দেন তিনি।
জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু।
তিনি বলেন, ‘গত ৪ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কুড়িগ্রাম জেলার ভিডিও কনফারেন্সে আমি তাকে সবিনয়ে জানাই যে কুড়িগ্রামকে সবাই পশ্চাৎপদ এলাকা হিসেবে জানে। এখানকার মানুষ না চাইতেই তিনি জেলাবাসীর জন্য অনেক কিছু করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি কুড়িগ্রামকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিলেন। মুজিব বর্ষে এ এক অনন্য পাওয়া।’
এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, ‘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামকে অনেক কিছু দিয়েছেন। আমরা তাঁর কাছে চির কৃতজ্ঞ। আমি এখন জেলাবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে, সামনের দিন প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটি মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি তার প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল দেবেন। আমি নিজেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবি জানাবো। আমরা জেলাবাসীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তাঁকে যেন সুস্থতার সাথে দেশ পরিচালনার সামর্থ্য দেন।’
/নিউজ/কুড়িগ্রাম//চন্দন/ডিসেম্বর/২১/২০