। নিউজ ডেস্ক ।।
‘গরীব মানুষ, শীতের কাপড় কটাই (কোথায়) পাই? ছাওয়ার ঘরে রোজগার নাই, কেমন করি কাপড় কিনি দেয়।’ কথাগুলো বলার সময় ঠাণ্ডায় কাঁপছিলেন আছিয়া বেওয়া।
কথা বলার সময় তার কণ্ঠস্বরও কেঁপে উঠছিল। শরীরে শীতের পোশাক ছিল না তার। কষ্ট পাচ্ছিলেন প্রবীণ এই নারী।
আছিয়া বেওয়া নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামাল গ্রামের বাসিন্দা।
এই নারীর মতো জেলার চর ও গ্রামাঞ্চলের বহু প্রবীণ শীতের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন।
বাদ যায়নি শিশুরাও। তারা শীতে কষ্ট ভোগ করছে। শীত বস্ত্রের অভাব তাদের কষ্টের মাত্রা বাড়িয়েছে বহুগুণ।
জেলার রাজারহাট আবহাওয়া অফিস জানায়, রবিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনিম্ন।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে চলছে শীতের দাপট। গত কয়েকদিন ধরে ক্রমেই এ জেলার তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে।
রবিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল এ জেলায়।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে বিপাকে পড়েছে জেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষ।
বিশেষ করে নদী বিধৌত এ জেলার চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ চরম কষ্টে দিন পার করছেন।
রাতে শীতের দাপটে মানুষের অবস্থা জবুথুবু। দিনের হালকা সূর্যে আলো লোকজনকে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে।
জেলার সিভিল সার্জন অফিস জানায়, গত কয়েকদিনে হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
জেলার জেনারেল হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
দিনমজুর শ্রেণির মানুষজন ঠাণ্ডায় কাজে বের হতে পারছে না।
এতে অনেক দিনমজুর পরিবার ভরণ পোষণ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
শীতের প্রকোপ মোকাবিলায় তারা কম্বলের পাশাপাশি সোয়েটার চাইছে।
দুধ কুমার নদ এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, তাদের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ দিন মজুর। ঠাণ্ডায় কাজে বের হওয়া তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
দিনমজুররা শীতবস্ত্র হিসেবে ভারী সোয়েটার কিংবা জ্যাকেট চাইছে।
মামুন বলেন, ‘কম্বল নিয়ে তো মানুষ কাজে বের হতে পারে না। শীতের পোশাক দিলে সেগুলো পড়ে অন্তত কাজ করতে পারবে।, দিনটা তাদের উপার্জনহীন হয় না।’
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস জানায়, জেলার ৯ উপজেলায় ৩৫ হাজার কম্বল এবং ৯ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা বিতরণ চলছে।
এছাড়াও শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য উপজেলা প্রতি ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে।
জেলার রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, জেলায় মাঝারি ধরণের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আগামী ৭২ ঘণ্টা এই অবস্থা বিরাজ করতে পারে।
/নিউজ/উলিপুর//চন্দন/ডিসেম্বর/২০/২০