।। নিউজ ডেস্ক ।।
ইলিশ শিকারের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ জুড়ে জেলে নৌকার অবাধ বিচরণ থাকলেও গত ১৬ দিনে জেলেদের জালে উল্লেখযোগ্য হারে ইলিশ মেলেনি। জেলেরা বলছেন, সারাদিন নদের বুক জুড়ে জাল নিয়ে বিচরণ করলেও নৌকা প্রতি দুই একটি ইলিশ মিলছে। তবে বেশিরভাগ জেলেকেই হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ এলাকা ঘুরে ইলিশ জেলেদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, ভাটিতে বাধা না পেলে সমুদ্র থেকে কুড়িগ্রামের জল সীমায় আসতে ইলিশের আরও দুই একদিন সময় লাগতে পারে।
প্রতি বছর সরকার ঘোষিত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে ইলিশের বিচরণ দেখা যায়। বিগত কয়েক দশকের মধ্যে ২০১৭ সালে জেলার নদ-নদীতে সর্বোচ্চ পরিমাণ ইলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও চলতি বছর জেলেদের জালে ইলিশ মিলছে না বলে জানিয়েছেন চরাঞ্চলের ইলিশ জেলেরা। প্রশাসনের নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সীমান্তবর্তী এলাকায় অসংখ্য জেলে নৌকা ইলিশ শিকারে নদে জাল ফেললেও উল্লেখযোগ্য হারে ইলিশের দেখা মিলছে না।
সম্প্রতি জেলা সদরের যাত্রাপুর, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ও সাহেবের আলগা ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদে কয়েকশ’ মিটার দূরে দূরে জেলেরা ইলিশ শিকারে ব্যস্ত থাকলেও জালে ইলিশ মিলছে না। জেলেরা বলছেন, সারাদিন কয়েক দফা জাল তুলে দুই থেকে তিনটি ছোট আকারের ইলিশ মিলছে যা তারা বাড়িতে নিয়ে পরিবার সহ খাচ্ছেন। তবে কোনও জেলে পরিমাণে কিছু বেশি পেলে তা বিক্রি করে দিচ্ছেন।
উলিপুর উপজেলার মশালের চর এলাকার ব্রহ্মপুত্রে নদে ইলিশ শিকারে ব্যস্ত সুজন, মোসলেম এবং জাহাজের আলগা এলাকার মমিনুলসহ ব্রহ্মুপুত্রের জেলেরা জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত জেলেদের জালে ইলিশ মিলছে না। নদে পর্যাপ্ত পানি ও স্রোত থাকলেও ইলিশের তেমন বিচরণ নেই। তারা এক নৌকায় দুই তিনজন মিলে নদে জাল ফেললেও সারাদিন দুই চারটি করে ইলিশ মিলছে যা আকারে অনেক ছোট।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ব্রহ্মপুত্রে ইলিশ শিকারে ব্যস্ত উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকার বাসিন্দা কেছমত আলী জানান, ‘ তিন বছর আগে যে মাছ পাওয়া গেছিলো এবছর সেই মাছ নাই। জাল ফেলি, মাছ ধরে (আটকায়) না!’
সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অবগত রয়েছেন জানিয়ে কেছমত বলেন,‘ চরে বর্তমানে কাজ নাই। নদীতে জাল ফেইলা যে দুই চারটা মাছ পাই তাই নিয়া গিয়া বউ বাচ্চাগো খাওয়াই। বেচনের (বিক্রির) মাছ পাওয়া যায় না।’
জেলেদের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) কালিপদ রায় বলেন, ‘ ইলিশ মাছকে সমুদ্র থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে কুড়িগ্রামের জল সীমায় আসতে হয়। এই পথ অতিক্রম করতে প্রায় ১২/১৩ দিন সময় লাগে। মাঝ পথে বিভিন্ন জেলায় নদ-নদীতে জাল কিংবা নাব্য সংকটে পরিব্রাজন বাধাগ্রস্থ হলে এ সময় আরও বেশি লাগতে পারে। সে হিসেবে জেলার নদ-নদীতে ইলিশ মাছ আসতে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সম্ভবত সে কারণে এখনও পর্যাপ্ত ইলিশের বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।’
অভিযান নিয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে এই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘ সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও জনবল সংকটে পর্যাপ্ত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব না হলেও নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অভিযান কালে জেলেরা নদীতে জাল ফেলে রেখে পালিয়ে যান। আমরা এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষাধিক মিটার কারেন্ট জাল উদ্ধার করে তা পুড়িয়ে দিয়েছি। তবে মাছ উদ্ধার অত্যন্ত নগন্য।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদে প্রায় ১ শ’ ৬৪ টি অভিযানে প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৫০ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এসব অভিযানে ইলিশ উদ্ধার হয়েছে মাত্র ১৩ কেজি। আর ইলিশ শিকারের নিষিদ্ধ সময়ে নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ইলিশ জেলের জন্য ভিজিএফ এর ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা বিতরণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
//নিউজ/উলিপুর//চন্দন /নভেম্বর/১/২০