।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মহিলাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিচারের নামে প্রহসন করে এলাকার মাতব্বররা অভিযুক্ত যুবককে দিয়ে ওই মহিলা ও তার মায়ের হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়ে মিমাংসা করে দেন। ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতেও বাঁধা দেন ওই মাতাব্বরা। ঘটনার আট দিন পর পরিবারের লোকজন কৌশলে থানায় এসে শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাতে মামলা করেন। ঘটনাটি ঘটেছে, কাশিয়াগাড়ি গ্রামে।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের কাশিয়াগাড়ি গ্রামের ওই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মহিলা (৩০) এক সন্তানের জননী ও স্বামী পরিত্যাক্তা। প্রায় ৮ বছর থেকে ওই মহিলা পিতার বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। ঘটনার দিন গত ২৩ অক্টোবর দুপুরে বাড়ির পাশ্ববর্তী কাশিয়াগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ওই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মহিলা ছাগল চড়ানোর (ঘাস খাওয়ানো) জন্য যান।
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তিনি ছাগলসহ স্কুলের বারান্দার এক কোনে আশ্রয় নেন। এ সময় প্রতিবেশি কপিল উদ্দিনের ছেলে তিন সন্তানের জনক মোস্তাফিজার রহমান (৪৫) ওই মহিলাকে একা পেয়ে সেখানেই জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এরই এক পর্যায়ে ওই মহিলার চাচী ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়। এ সময় তার ভাতিজিকে ওই অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে মোস্তাফিজার পালিয়ে যায়। এলাকার ইউপি সদস্য ঘটনাটির বিচার করার কথা বলে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন।
ভুক্তভোগীর মা ও বোন অভিযোগ করে বলেন, ধর্ষন চেষ্টার ঘটনা ধামাচাপা দিতে তিনদিন পর এলাকার ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন খন্দকার মন্টুর নেতৃত্বে এলাকার মাতব্বরদের উপস্থিতিতে কাশিয়াগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সালিশ বৈঠক করা হয়। সেখানে আমাদের পরিবারের সদস্যদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। এরপর বিচারের নামে প্রহসন করে অভিযুক্ত মোস্তাফিজারকে দিয়ে ভুক্তভোগীর (বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মহিলার) হাত ও তার মায়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে ঘটনার মিমাংসা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়।
তারা আরও বলেন, এ ঘটনায় আমরা সুষ্ঠ বিচার না পেয়ে থানায় অভিযোগ করতে চাইলে ওই মাতব্বরা আমাদের নানা ভাবে হুমকি-ধামকি ও বাঁধা প্রদান করতে থাকেন। মাতব্বরা বলেন বিষয়টি মিমাংসা করে দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে মিমাংসা করা কাগজে সকলের স্বাক্ষর রয়েছে। এ ব্যাপারে কোথাও কোন অভিযোগ করে লাভ হবে না। নিরুপায় হয়ে পরিবারের লোকজন আলোচনা করে সুষ্ঠ বিচারের আশায় কৌশলে থানায় এসে ঘটনার আট দিন পর শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাতে প্রতিবন্ধীর মা বাদী হয়ে মোস্তাফিজারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
ঘটনার প্রধান সালিশকারী ধামশ্রেনী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন খন্দকার মন্টু সালিশ বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, উভয় পক্ষের সম্মতিতে সামাজিক কারনে মিমাংসা করে দেয়া হয়েছে। মামলা করতে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি সঠিক নয়। মিমাংসা না মানলে তারা আইনের আশ্রয় নিতেই পারে।
উলিপুর থানার ওসি (তদন্ত) রুহুল আমীন জানান, ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে মামলা দায়ের করেছেন। আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
//নিউজ/উলিপুর//চন্দন/অক্টোবর/৩১/২০