।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে গাভী দেয়ার কথা বলে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড কর্তৃক মিল্ক ভিটা হতে গাভী ঋণ দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারনার অভিযোগে ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সমবায় কমকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড মিল্ক ভিটার আওতায় উলিপুরে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৪৩টি প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সমন্বয়ে উলিপুর কেন্দ্রীয় দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতি লিঃ এর কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি মনোনীত হন আফজাল হোসেন মাষ্টার। প্রতিটি সমবায় সমিতি ২১ থেকে ৩৩ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠন করা হয়। এভাবে প্রায় ৪৩টি সমবায় সমিতির সহস্রাধিক সদস্য আওতাভূক্ত হন।।
সভাপতি আফজাল হোসেন মাস্টার প্রতিটি সমবায় সমিতির সদস্যদের (প্রায় ১ হাজার সদস্য) মিল্ক ভিটা থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে দেয়ার কথা বলে সমিতির সদস্য অন্তর্ভূক্তি বাবদ জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে প্রতারনার মাধ্যমে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া প্রতিজনের কাছে মিল্ক ভিটা থেকে গাভী ঋণ বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে নিয়ে দেয়ার কথা বলে নগদ ১০ হাজার টাকা করে প্রায় ১ কোটি টাকা প্রতারনার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন এবং ঋণের জামানত হিসাবে সদস্যদের নিকট থেকে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক লিঃ উলিপুর শাখার স্ব-স্ব চেক বই নিজের কাছে গচ্ছিত রাখেন। ঋণের টাকা গাভীর দুধ বিক্রি করে পরিশোধ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। এভাবে প্রতারনার মাধ্যমে তিনি প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাত করেন।
এরপর থেকে সমিতির প্রতারনার স্বীকার সদস্যগণ তার পিছনে গাভীর ঋণের টাকার জন্য ঘুরতে থাকেন। তিনি নানা টালবাহনা করে সদস্যদের ঘুরাতে থাকেন। এরই মধ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিঃ এর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ মিল্ক ভিটার উলিপুর দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র (চিলিং সেন্টার) পরিদর্শনে আসলে ভূক্তভোগীরা জানতে পারেন মিল্ক ভিটা থেকে ঋণ নিতে কোন টাকা লাগে না। এরপরই মিল্ক ভিটার নাম ব্যবহার করে প্রতারনার মাধ্যমে আফজাল হোসেনের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাটি প্রকাশ পায়।
এ ঘটনার পর সভাপতি আফজাল হোসেনের কমিটির সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলী, সাধারন সম্পাদক হায়দার আলীসহ ভুক্তভোগী একাধিক সমবায় সমিতির সদস্যগণ তার বিরুদ্ধে প্রতারনার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাতের বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেন।
উলিপুর কেন্দ্রীয় দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতি লিঃ এর সাধারন সম্পাদক হায়দার আলী বলেন, উলিপুরে চিলিং পয়েন্ট হওয়াতে আমরা খামারীরা সেখানে দুধ বিক্রি করতে পারছি। কিন্তু কমিটির সভাপতি সমবায় সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে মিল্ক ভিটা থেকে গাভী ঋণ নিয়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় জনপ্রতি ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সদস্য কিংবা খামারীকে তিনি ঋন নিয়ে দিতে পারেননি। এ কারনে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী সমিতির একাধিক সদস্যও অভিযোগ করেছেন।
উলিপুর কেন্দ্রীয় দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি আফজাল হোসেন মাষ্টারের সাথে অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, চিলিং সেন্টার স্থাপনের শুরু থেকেই একটি বিরোধী গ্রুপ ছিল। তারাই বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানীর জন্য এসব করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য চিলিং ষ্টেশনটি এখান থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করা। সমিতির সদস্যদের কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকা বিভিন্ন ভাবে আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সব অভিযোগ সম্পুর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
উলিপুর সমবায় অফিসার সাইফুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ট্রেনিং এ ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি খোঁজ খবর নিতে পারিনি। তবে আগামী সপ্তাহে এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, এ বিষয়ে তদন্ত হবে, তদন্তের পর অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্রঃ bangla.report