|| আব্দুল মালেক ||
দীর্ঘ বন্যার পর উলিপুরে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন খামারীসহ প্রান্তিক চাষিরা। টাকা দিয়ে সোনা মিললেও যেন মিলছেনা খড়। ফলে অনেকেই পানির দামে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অপরদিকে, অবস্থাসম্পন্ন কৃষকরা চুরি হওয়ার ভয়ে রাত জেগে খড়ের গাদা পাহারা দিচ্ছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ সূত্র জানা গেছে, উপজেলায় ১ লাখ ২৫ হাজার গরু ও ১০ হাজার মহিষের রয়েছে। ছোট-বড় খামার রয়েছে ৪’শ ১৫ টি। এরমধ্যে খাদ্যের জোগান দিতে না পারায় প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় শতাধিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এসব খামারে গরু প্রতি ৫ থেকে ৬ কেজি খড়ের প্রয়োজন হয়। খড়সহ অন্যান্য খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে অর্ধেক খড় গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। এত করে অনেক খামারী গবাদী পশুর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে পানির দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে, উপজেলার গুনাইগাছ, দলদলিয়া, বুড়াবুড়ি, হাতিয়া অনন্তপুর, ভবেশ, নয়াদাড়া, ধামশ্রেনী কাশিয়াগাড়ী জোনাইডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার খামারী ও প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ১০০ খড়ের আটি ১ হাজার ৬’শ থেকে ১ হাজার ৭’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চড়া দামে দুরদুরান্ত থেকে এসব খড় কিনে আনতে হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতূল। অনেক সময় টাকা দিয়েও খড় মিলছে না। এদিকে দুধের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারীরা।
কাশিয়াগাড়ী গ্রামের খামারী জাহেদুল ইসলাম সাজু বলেন, তার খামারে ১২ টি গরু রয়েছে। প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক আটির প্রয়োজন হয়। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় চাহিদামত গো-খাদ্যের জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শহীদ এন্ড ডেইরী ফার্মের স্বত্বাধিকারী মুজিবুল আহসান রাজু বলেন, গো-খাদ্যের চড়া দাম, টাকা দিয়েও সোনা মিললে, খড় মিলছেনা। প্রতিটি আটির দাম ১৬ থেকে ১৭ টাকা। তিনি আরো জানান, তার খামারে ৫৭ টি গরু ছিল , খাদ্যের অভাবে ৪২ টি গরু পানির দড়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে ১৫টি গরু রয়েছে। এসব গরুর খ্যাদ্যের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
হাতিয়া ইউনিয়নের বাবুরচর গ্রামের প্রান্তিক খামারী শফিকুল ইসলাম বলেন, তার খামারে ১১টি গাভী ছিল। কয়েকবারের ভয়াবহ বন্যায় চরাঞ্চলের চারণ ভূমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় গো খাদ্যের চরম দূর্ভোগ দেখা দেয়ায় নিরুপায় হয়ে পানির দরে গাভীগুলো বিক্রি করেছেন।
একই কথা জানান, খামারী আফজাল হোসেন মাষ্টার, রেজাউল করিম, আমিনুল ইসলামসহ অনেকে।
হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বিএসসি বলেন, ৫ দফা বন্যায় খড়ের গাদা ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় গো-খাদ্য সংকট নিরসনে প্রণোদনা চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ প্রধান বলেন, করোনাকালীন সময়ে প্রণোদনা পাওয়া গেলেও গো-খাদ্য সংকট নিরসনে কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।