।। আব্দুল মালেক ।।
বন্যার ধকল কাটতে না কাটতেই রোপা আমন ধানক্ষেত নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত একর জমির রোপা আমন ধানক্ষেত ইঁদুরের দল কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। ভুক্তভোগি কৃষকরা আলোর ফাঁদ, কাঁকতাড়ুয়া, জিংক ফসফেট ও সেমকাফ জাতীয় ওষুধ স্প্রে করেও ইঁদুরের হাত থেকে ধান ক্ষেত রক্ষা করতে পারছে না। ফলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পর ইঁদুরের আক্রমণে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৩ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু রোপা আমন মৌসুমের শুরুতে এ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে কৃষি বিভাগ ভাসমান বীজতলা তৈরি করে কৃষকের মাঝে বীজ সরবরাহ করেন। এছাড়াও কৃষকরা ব্যক্তিগত ভাবে চড়া দামে আমনবীজ সংগ্রহ করে তা রোপন করেন। ফলে অনেক কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও বাম্পার ফলনের আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু পঞ্চম দফায় আবারও তিস্তা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেলে এসব ধান ক্ষেত পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। বন্যার ধকল কেটে আমন ধান ক্ষেতে সবুজের সমারোহ হলেও নতুন করে ইঁদুরের উপদ্রুপ শুরু হয়। ইঁদুরের হাত থেকে ধানক্ষেত রক্ষা করতে অনেক কৃষক নির্ঘুম রাত জেগে পাহাড়া দিলেও তা রক্ষা করতে পারছেন না। অনেক কৃষক ক্ষেতের ধান গাছ ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা করতে আলোর ফাঁদ,কলাগাছ, মানুষের অবয়ব কাঁকতাড়–য়া বানিয়ে রাখলেও কোন কাজে আসছে না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে জিংক ফসফেট মিশিয়ে বিশটপ বানিয়ে ইঁদুর তাড়ানোর চেষ্টা করেও পারছেন না। এমনকি নালিরেট, সেমকাফ নামের ওষৃধ স্প্রে করেও কোন লাভ হচ্ছে না।
উপজেলার নারিকেল বাড়ি গ্রামের শাহাদত হোসেন নামের একজন কৃষক বলেন, ৮০ শতক জমির বেশির ভাগ আমন ধান গাছ ইঁদুর কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও কোন কাজ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে উৎপাদন খরচও উঠবে না। ওই গ্রামের কৃষক দুলাল, ফটিক, হাফিজুর রহমানসহ অনেকেই জানান, তাদের জমিও ধান গাছ কেটে সাবাড় করছে ইঁদুর। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকার আমন ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমন দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ইয়াবকুব আলী বলেন, ইঁদুরের আক্রমন থেকে ক্ষেত রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করে আসছেন।