।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না মতিয়ার রহমান (৬৭) নামের এক মুক্তিযোদ্ধার। পর পর দুইবার স্টোক করার কারণে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে রণাঙ্গনের বীরসেনা সু-চিকিৎসার অভাবে এখন শয্যাশায়ী। তিনি শেখ হাসিনাকে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বড় বোন হিসাবে দাবী করে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের জুম্মাহাট কেবলকৃষ্ণ গ্রামের হানিফ উদ্দিন মুন্সির পুত্র নিম্নমধ্যবিত্ত্ব পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থায় দীর্ঘ চার বছর ধরে শরীরের ডান সাইড প্যারালাইষ্ট-ব্রেইন স্টোক-হাই পেসার-ডায়াবেটিসক ও পায়ে ঘাঁসহ নানা জটিল রোগ নিয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি চলা ফেরা করতে পারেন না।
মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের খোঁজ নিতে তার বাড়িতে গেলে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে তার করুন পরিনতিসহ পরিবারের অসহায়ত্বের কথা, অসুস্থ্যতার কথা, অর্থের সু-চিকিৎসা করতে না পারাসহ অনাহারে-অর্ধাহারে তার দিনাতিপাতের কথা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতার টাকায় তার সংসারের খাওয়া পড়ার সংস্থানই যেখানে ঠিক মত চলে না, সেখানে চিকিৎসার ব্যয় ভার মিলবে কোথা থেকে। তিনি আরও বলেন, সংসারে স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অর্থের অভাবে ছোট ছেলে নাজমুল হাসান অনার্সে অধ্যয়নরত থাকা অবস্থায় মাঝ পথে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। একই কারনে ছোট মেয়ে মার্জিয়া জান্নাত ডিগ্রী পরীক্ষার ফরম পূরন করতে পারেনি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধার চেক ও পুলিশ ভাতার বই বন্ধক রেখেছেন। পরিবারের শেষ সম্বল পঞ্চাশ শতক জমিও বন্ধক রেখেছেন। বর্তমানে জরাজির্ণ কুঠিরে বসবাস তার। তার দাবী শেখ হাসিনা দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বড় বোন। তাই তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন।
মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান যুদ্ধকালীন স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেন, তিনি ১১ নং সেক্টরের চাঁন কোম্পানীর অধিনে যুদ্ধ করেছেন। ৭১ সালের ১৭ অক্টোবর চিলমারী উপজেলার রাজারভিটা মাদ্রাসা এলাকায় কুখ্যাত রাজাকার পঞ্চু মিয়াকে আটক করেন প্লাটুন কমান্ডার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে। ওই সময় সেখান থেকে রাজাকারদের দুইশত রাইফেল উদ্ধার ও ৮০ জন রাজাকারকে আটক করা হয়। ওই দিনই জোড়গাছ থেকে তৎকালীন কুখ্যাত রাজাকার নেতা ওলি আহম্মেদকেও আটক করা হয়। এরপর তাদের রৌমারীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্বরত কমান্ডারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর উলিপুরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারীদের মধ্যে তিনিও একজন। এ ধরনের যুদ্ধকালীণ অনেক ঘটনাই বর্ণনা করেন তিনি । যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে হাবিলদার হিসাবে অবসরে যান। তার মুক্তিবার্তা নং-০৩১৬০৭০৫০২ ও গেজেট নং-৩৭৩১।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-এ-জান্নাত রুমী আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে আবেদনটি পাঠানো হবে। উনি প্রকৃতপক্ষেই খুব অসুস্থ্য, এ ব্যাপারে আমি ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলব।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এবং সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু জানান, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে পূর্বেও তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুক সম্ভব আমরা সহযোগিতা করে যাব।