।। জেলা প্রতিনিধি ।।
করোনাকালে ভারতের জেলে বন্দি ২৫ বাংলাদেশিকে কারামুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে তৃতীয় দফা মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা। আজ সোমবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে চিলমারী উপজেলার চিলমারী-রমনাঘাট সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানবন্ধনে অংশ নেওয়া স্বজনরা জানান, ভ্রমণ ভিসা নিয়ে চিলমারীর ২৬ নাগরিক ভারতে বেড়াতে যান। সেখানে তারা তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে কেউ মাছ ধরার কাজ করতেন, আবার অনেকে খামারে দিন মজুরের কাজ করতেন। তাদের রোজগারের টাকায় এপারে পরিবারের ভরণপোষন চলতো। এরই মধ্যে করোনায় ভারতে ২য় ধাপের লকডাউনে গত ২ মে দু’টি মিনিবাসে করে আসাম রাজ্যের জোরহাট জেলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের চেংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার পথে ৩ মে সকালে বাহালপুর এলাকায় ধুবড়ি জেলা পুলিশ তাদের আটক করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতির মামলা করে তাদেরকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। বন্দিদের মধ্যে এক বাংলাদেশি ইতোমধ্যে কারা হেফাজতে মারা গেছেন। বাকিদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের পরিবার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা ভিনদেশে কারাগারে আটক থাকায় এসব পরিবার খাদ্যকষ্ট সহ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ভারতের জেলে বন্দি বাংলাদেশি নাগরিকদের মুক্ত করে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্বজনরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময় চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ২৬ বাংলাদেশি ভারতে যান। বৈধ পাসপোর্ট ও ভ্রমণ ভিসা থাকলেও ভারতে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন চলার মধ্যে গত ২ মে ওই ২৬ জন বাংলাদেশি দু’টি মিনিবাসে আসামের জোরহাট জেলা থেকে দেশে ফেরার উদ্দেশে রওনা দেন। পশ্চিমবঙ্গের চেংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা ছিল তাদের। ভারতে জেলে ও খামারকর্মী হিসেবে কাজ করা এসব বাংলাদেশিকে পরদিন (৩ মে) সকালে বাহালপুর এলাকা থেকে আটক করে আসামের ধুবড়ি জেলা পুলিশ। করোনা পরীক্ষার পর তাদের পাঠানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। গত ৫ মে ওই ২৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং ফরেনার্স (সংশোধিত) অ্যাক্ট, ২০০৪ এবং পাসপোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৬৭’র ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দেশটির পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাসপোর্টধারী এসব বাংলাদেশি টি-ওয়ান ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এই ভিসাধারীদের কাজের অনুমতি না থাকলেও আসাম পুলিশের অভিযোগ, এই বাংলাদেশিরা রাজ্যের জোরহাট, গোলাঘাট ও শিবসাগর এলাকায় কর্মসংস্থান কার্যক্রমে যুক্ত থেকে ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেছেন। তাদের মুক্তির দাবিতে কুড়িগ্রামে একাধিকবার মানববন্ধন করেন আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা। এরমধ্যে গত ১ জুলাই কারা হেফাজতে বকুল মিয়া নামে এক বাংলাদেশি মারা গেলে চারদিন পর তার মরদেহ দেশে স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। অপর ২৫ বাংলাদেশি এখনও ভারতের কারগারে অন্তরিন জীবন যাপন করছেন।