|| নিউজ ডেস্ক ||
উলিপুরে কিশোর গ্যাং নামে বখাটেদের কু-প্রস্তাব ও ইভটিজিং সহ্য করতে না পেরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। জুঁই আক্তার নামের ওই শিক্ষার্থীকে মুমুর্ষ অবস্থায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সে নারিকেল বাড়ি পন্ডিত মহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী। এর আগে ওই গ্যাংয়ের ছেলেদের ইভটিজিংয়ের বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ কিশোর গ্যাং গত (৩ আগস্ট) সোমবার দুপুরে জুঁই এর বাড়ীতে এসে তার বাবাকে বেধরক মারপিট করে। ঘটনা ঘটেছে সোমবার সন্ধ্যায় উলিপুর পৌর শহরের তেলীপাড়ায়।
জুঁই এর বাবা জুলফিকার আলী জানান, কিশোর গ্যাংয়ের এধরণের অন্যায় এবং বাড়ী ভাংচুরের প্রতিবাদ করায়, প্রতিবেশী মুদি দোকানদার মিলন মিয়াকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে মারাত্মক জখম করে। সে বর্তমানে গুরুত্বর আহত অবস্থায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে, কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে জুইয়ের বাবা ইলেকট্রেশিয়ান জুলফিকার আলী মানিক ও বাড়ির সদস্যরা বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা এখন বাড়িতে ঢুকতে পারছে না। থানায় এই কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন আসামীকে ধরতে পারেনি।
মেয়েটির পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, ইলেকট্রেশিয়ান জুলফিকার আলী মানিক এর মেয়ে জুঁই আক্তার। ছোটবেলা থেকে মেধাবী জুই। তার বাবা জানায়, জুই পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বলে শত কষ্টেও তাকে টিউশনি সহ সমস্ত খরচ দেন।
বেশ কিছুদিন থেকে এলাকার কিশোর শেখ ফরিদ, সেনা মিয়া তার মেয়েকে প্রেম , বিয়ে সহ নানা রকম প্রস্তাব দিয়ে আসছে। কিন্তু জুই তাতে রাজী হয়নি। এ কারণে ঐ দুজন সহ মামুন, আঙ্গুর বিপুল, খোকন, মুকুট, শাহীন, মনছুর প্রায় প্রতিদিনই জুই প্রাইভেটে যাবার সময় ও বাড়ির বাইরে কোথাও যাওয়ার সময় নানা রকম ইভটিজিং করতো। এবং নানা রকম কু-প্রস্তাব দিত।
তাদের এ অত্যাচার নীরবে সহ্য করতো সে। এক সময় অতিষ্ট হয়ে জুই বাধ্য হয়ে ঘটনা তার মাকে বলে। বিষয়টি তার মা তার বাবাকে জানালে ঐ কিশোরদের অভিভাবকদের জানায়। এটাই অপরাধ জুঁইয়ের বাবার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ কিশোর গ্যাং সোমবার দুপুরে জুঁই এর বাড়ীতে এসে, তার সামনেই তার বাবাকে বেধরক মারপিট করে।
ঘটনাটি থানায় অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এতে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ চলে গেলে, ঐদিন বিকালে আবার এসে বাড়ি ভাংচুর করে। এতে বাধা দেয় প্রতিবেশী মুদি দোকানদার মিলন মিয়া। এরপর কিশোর গ্যাং মিলন মিয়াকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যেয়ে, পার্শ্ববর্তী একটি বিলের কাছে এলোপাথারীভাবে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে বিলের পানিতে ফেলে যায়।
একের পর এক ঘটনায় জুঁই সহ্য করতে না পেরে বাড়ির মানুষদের অজান্তে, বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বাড়িতে তার অবস্থার অবনতি হলে, তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে, তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপালে পাঠানো হয়। বর্তমানে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে সে মৃত্যুর সংগে পাঞ্জা লড়ছে। চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে জুই এর পরিবার। তারা সকলে বাড়ী থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রতিবেশী মিলন মিয়ার বাবা আবদুল হাকিম জানান, এই কিশোর গ্যাং গ্রামে প্রায় নানা রকম অত্যাচার করে মানুষের সাথে। আমার ছেলে প্রতিবাদ করায় সে মৃত্যু পথযাত্রী। আমি এ অন্যায়ের বিচার চাই।
নিপীড়নের শিকার জুঁই জানায়, ঐ বখাটে যুবকরা প্রায় প্রতিদিন প্রাইভেটে যাবার সময় নানা রকম ইভটিজিং করে ও কু-প্রস্তাব দেয়। এদের মধ্যে সেনা ও ফরিদ সবচেয়ে বেশী ইভটিজিং করতো। নীরবে সহ্য করলেও যখন পারিনি তখন মাকে ঘটনাটি বলেছি। আমি ঐ বখাটেদের শাস্তি চাই।
প্রতিবেশী রনি জানান, এই কিশোর গ্যাং ঐ এলাকায় মাদক সহ নানা রকম অন্যায় অত্যাচার করে আসছে। মানুষ ভয়ে কিছু বলার সাহস পায়নি এতদিন। তারা এ অন্যায়ের বিচার চান।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা হয়েছে।