।। সুভাষ চন্দ্র ।।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি ফের বাড়ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হচ্ছে। প্রায় ২৭ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় থাকা মানুষের মাঝে নতুন করে বন্যা আতংক বিরাজ করছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় অন্তত চার লাখ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে তিস্তার পানির প্রবল স্রোতে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়ির হাট এলাকায় ক্রস বাঁধের মাটির ৬৫ মিটার পানিতে ভেসে গেছে। ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিরাম এলাকার ক্রস বাঁধেও। এতে করে ঐ দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের হুমকীতে পড়েছে। গত ৫ দিন ধরে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই দুই নদ-নদীর অববাহিকার প্রায় আড়াই শতাধিক চরের ৩ লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘ ২৮ দিন ধরে নৌকায় ও ঘরের ভিতর ঝুলন্ত মাচা অথবা টং পাতিয়ে পানির মধ্যে বসবাস করছে। এ অবস্থায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। ত্রাণের অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করে দিচ্ছে দুর্গম চরাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষজন। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব এলাকার বন্যাদুর্গতরা। ফলে এসব এলাকায় ক্রমাগত স্বাস্থ্যঝুকি বাড়ছে। চরাঞ্চলের চারনভুমিগুলো দীর্ঘদিন বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় গৃহপালিত পশুর খাদ্য সংকটের কারণে অনেকেই পানির ধরে তাদের গবাদিপশু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উঁচু বাঁধ, পাকা সড়ক ও বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া বন্যা দুর্গত মানুষজন সহসাই ঘরে ফিরতে পারছে না।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের আকছেদ আলী ও রোজিনা বেগম জানান, প্রায় এক মাস ধরে পানির উপর বসবাস করছি। প্রতিদিন ভাবছি পানি কমবে কমবে কিন্তু পানি কমার কোন নাম গন্ধ নেই। এ পর্যন্ত কোন ত্রাণ পাইনি। ঘরের খাবারও শেষ হয়ে গেছে। অন্যের কাছে ধার দেনা করে সামান্য কিছু খাবার এনে এক বেলা খেয়ে দিন পার করছি।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আইয়ুব আলী সরকার জানান, আমার ইউনিয়নের ২৫ শো পরিবারের সবাই প্রায় ১ মাস ধরে পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে। বন্যার শুরুর পর থেকে এরমধ্যে ১০৫০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া সম্ভব হয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯ উপজেলার বন্যা দুর্গত মানুষদের জন্য এ পর্যন্ত ১৯০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ করা হয়েছে। আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে বন্যা কবলিত পরিবারগুলো ভিজিএফ এর ১০ কেজি করে চাল পাবে।