|| আব্দুল মালেক ||
‘ঘর-বাড়ি কিছুই আছিলো না, ৬ মাস হলো শেখের বেটির দেয়া ঘরোত উঠছিনু বাহে। সেটাও আজ নদীত চলি গেলো। জাগা-জমি কিছুই নাই, মুই এ্যালা কিসের তলোত থাকিম’। এভাবেই অশ্রুভেজা চোখে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন গ্রামের আবুল হোসেন প্রামাণীক (৫০)। শনিবার ভোর হতেই তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তীব্র ভাঙনে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দূর্যোগ সহনীয় বাড়িটি ভাঙনের কবলে পড়ে। ওই গ্রামের জাহেরুল হক, রবুল হোসেন, দেলদার হোসেন, কছির উদ্দিন,সামেদ জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভোর হতেই নিমিষেই আমাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যায়। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের কর্র্পূরা, চর রতিদেব,চর কর্পূরা গ্রামের প্রায় ২০ পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে।
এদিকে, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি ব্রীজ পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদী অববাহিকার বিস্তীর্ণ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষজন স্যানিটেশনসহ গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে দলদলিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সির বাড়িসহ কর্পূরা করিমীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঠুটাপাইকর উচ্চ বিদ্যালয়, ঠুটাপাইকর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র, ওই ইউনিয়নের অর্জুন গ্রামের নালারচর সোলেমানীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ কয়েকশত ঘর-বাড়ি ও আবাদি জমি।
দলদলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সি বলেন, আমার বাবা আব্দুল করিম মুন্সি ও তিন মায়ের মধ্যে বাবা ও এক মায়ের কবর শুক্রবার অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। বাকি দুই মায়ের কবরও যেকোন মহুর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। তিস্তা ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
অপরদিকে, তিস্তা অববাহিকার থেতরাই ইউনিয়নের পাঁকার মাথা, চর গোড়াইপিয়ার, হোকডাঙ্গা, মাঝিপাড়া, ডাক্তারপাড়া, গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দু নেফড়া, টিটমা, সন্তোষ অভিরাম, কাজিরচক, সুখদেব ও বজরা ইউনিয়নের সাদুয়া দামারহাট, পশ্চিম বজরা, সাতালস্কর, বগুলাকুড়া, চাদনী বজরা, চর বজরা গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর গত দুই দিনের ব্যবধানে কয়েকশত আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।