কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন বলেছেন, বুড়িতিস্তার খনন হবে, পরিসর বৃদ্ধি পাবে এবং নাব্যতাও ফিরে আসবে। সম্প্রতি উলিপুর ডট কমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বুড়িতিস্তার প্রসঙ্গ ছাড়াও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিসহ নানান বিষয়ে মতামত দিয়েছেন এই সংসদ সদস্য।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন উলিপুর ডট কমের সহ-সম্পাদক আতিক মেসবাহ্ লগ্ন।
উলিপুর ডট কমঃ আপনার দৃষ্টিতে উলিপুরে করোনার প্রভাব কি পড়ল। উত্তরণের জন্য কি কি করেছেন বা করছেন।
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে যিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে এই বৈশ্বিক সমস্যাকে মোকাবেলা করছেন। তার উৎসাহ ও উদ্দীপনায় জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। আমরা মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিরলসভাবে কাজ করছি। কিভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা যাবে, কিভাবে আমাদের পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করতে পারব এসব বিষয়ে আমরা মানুষকে সচেতন করেছি।
উলিপুর ডট কমঃ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আপনি কি কি উদ্যোগ নিয়েছেন?
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ আমরা নিশ্চিত করেছি যাতে স্বাস্থ্যবিভাগ সবার জন্য সাবলীলভাবে কাজ করতে পারে। স্বাস্থকর্মীরা যেন স্বত:স্ফূর্ততার সাথে কাজ করতে পারেন এ বিষয়টি আমরা লক্ষ্য রেখেছি। এখানে যাতে কোন অসুস্থ মানুষ বিনা চিকিৎসায় না থাকে সে ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া আমরা এখানে কেয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছি।
উলিপুর ডট কমঃ দুর-দুরান্ত থেকে যারা এলাকায় আসছে তাদের জন্য কোন ধরণের উদ্যোগ নিয়েছেন?
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ যারা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ আমরা তাদের বাড়িতে লকডাউন দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ করেছি। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি। ফলে আমার নির্বাচনী এলাকা উলিপুর করোনার প্রকোপ থেকে অনেকাংশেই মুক্ত আছে।
উলিপুর ডট কমঃ শোনা যায় উলিপুরের অনেকেই খাদ্যাভাবের কারণে না খেয়ে দিনানিপাত করে থাকে। তাদের জন্য কি ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ আমরা মানুষকে কষ্ট না দিয়ে, ছোট না করে, রাতে অন্ধকারে বাড়ি বাড়ি খাদ্য পৌঁছে দিয়েছি। এর কারণে কেউই অনাহারে নেই। খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে আমরা সোচ্চার।
উলিপুর ডট কমঃ মঙ্গাপীড়িত এলাকার এই তকমা আর কতদিন উলিপুরবাসী বহন করবে?
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ এ কথাটির সাথে আমি একমত না। কুড়িগ্রাম কিন্তু এখন আর খাদ্যভাবের জেলা নয়। বরং কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্যে উদ্বৃত্ত। আমাদের উলিপুরে যে চাহিদা ছিল খাদ্যে, তার থেকে চল্লিশ হাজার মেট্রিকটন খাদ্য উদ্বৃত্ত আছে। এভাবে গোটা কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্যে উদ্বৃত্ত আজকে। খাদ্যে সংকট কিন্তু আমাদের নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্নমুখী উদ্যোগের কারণে মন্দা আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। উলিপুরে আজ বিভিন্নমুখী ফসল হচ্ছে। আজ শুধু গতানুগতিক ধানপাট নয়, চরেও সাধারণ জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। আমাদের এলাকার মানুষ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। যার ফলে মঙ্গা আর আমাদের এখানে নেই।
উলিপুর ডট কমঃ কর্মহীন মানুষের জন্য আপনি কোন ধরণের উদ্যোগ নিয়েছেন?
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ যারা কর্মহীন হয়ে গেছে তাদেরকে আমরা ব্যাপকভাবে ত্রাণের আওতাধীন করেছি। তাদেরকে সম্প্রদায় অনুযায়ীও তালিকাভুক্ত করেছি। যেমন- হিজরা, মুচি, জেলে এ ধরণের নিম্নআয়ের মানুষ যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এর ফলে তারা কিন্তু কষ্টে নেই। রেশন কার্ড, আড়াই হাজার টাকার সরকারি সুবিধা ইত্যাদি নিয়ম ঠিক রেখেই পৌঁছাচ্ছি। আমাদের ছয় লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে দেড় লক্ষ পরিবার এ ধরণের ভাতা পাওয়ার মতো। সেগুলোর সুষ্ঠ বিতরণের জন্য আজ একজন মানুষও আর অনাহারে নেই।
উলিপুর ডট কমঃ উলিপুরে তো কয়েকটা অঞ্চল কয়েক ধরনের। যেমন- চর এক ধরনের, পূর্বাঞ্চল এক ধরনের। তো এ ধরনের এলাকাভিত্তিক কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা আপনার আছে কিনা?
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ আমরা প্রথমতঃ প্রাধান্য দিচ্ছি আমাদের চরকে। আমাদের চৌদ্দটি ইউনিয়নের মধ্যে আটটিই চরবেষ্টিত ও নদীভাঙ্গনের শিকার। একটা বিশাল অংশের জনগোষ্ঠী আজকে অত্যন্ত কষ্ট করে জীবনযাপন করে। কিন্তু চরের যে চিত্র আজকে সেটি পরিবর্তিত হয়েছে। আগের মতো কিন্তু নেই। এখন চরের মধ্যেই বিভিন্নমুখী ফসল উৎপন্ন হচ্ছে এবং চরের মানুষ অনেক ভালো আছে। আজকে চরের মধ্যে আমরা কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব দেখিনি। পৌরসভাতেই সম্প্রতি মিউচুয়াল ব্যাংকের এক কর্মকর্তার করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ রিপোর্টটা আমরা পেয়েছি। বাকি যেগুলো সেগুলো বিভিন্ন ইউনিয়নে। আমরা তাদেরকে লকডাউনে রেখেছি। সার্বক্ষণিক তাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। করোনা প্রতিরোধে সরকারী আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেছি। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছি। বাজারে জনসমাগম যাতে বেশি না হয়, সেজন্য আমাদের পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে।
উলিপুর ডট কমঃ ত্রাণের সঠিক বিতরণ ও প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে জনগণের প্রতি আপনার বার্তা কি?
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ জনগণের সহযোগিতা ছাড়া কোনো ভালো উদ্যোগ কখনও সফল হয় না। জনগণ সোচ্চার থাকলেই সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। আজকে যে ত্রাণ প্রক্রিয়া চলছিল সেখানেও জনগণ সোচ্চার ছিল। মেম্বার বা চেয়ারম্যান তাদের সাথে আমাদের দলীয় লোকজন ছিল। এখানে আমার প্রতিনিধি এবং স্থানীয় ইমাম ছিলেন।
উলিপুর ডট কমঃ উলিপুরের ঐতিহ্য সংরক্ষণে বুড়িতিস্তার নাব্যতা ফিরিয়ে আনা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ বুড়িতিস্তা নিয়ে আমি মিশ্র প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেছি। যেভাবে অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আমরা বুড়িতিস্তাকে আজকের অবস্থানে এনেছি, আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্তুষ্ট নই। এটা একটা নদী ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অদক্ষতার কারণে এটা একটা খাল হয়ে গেছে। আমরা কিন্তু সেটাকে খাল হিসেবে চাইনি। আমরা পদক্ষেপ নিব যেন এটা নদীতে রুপান্তরিত হয়, সে চেষ্টা আমরা করব। এরপরও যা হয়েছে, এটা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, তবুও তা ইতিবাচকই হবে।
উলিপুর ডট কমঃ নদীভাঙ্গনের শিকার মানুষদের নিয়ে আপনার কোন পরিকল্পনা আছে কি?
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ তিস্তার উপর আমাদের ৮৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বিবেচনাধীন আছে। করোনার জন্য প্রকল্পটি পাশ হতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। তবে কাজ শুরু হলে তিস্তানদী খনন হবে। পাড় বাধাই হবে। সেখানে বৃক্ষরোপন হবে। পাড় দিয়ে রাস্তা বাধাই হবে। যার ফলে তিস্তা কিন্তু আর ভাঙ্গবে না। তিস্তা তখন খুব সুন্দর একটা নদী হবে। মানুষ দেখার জন্য আসবে। এটা হয়ে গেলে এর শাখা-প্রশাখা হিসেবে বুড়িতিস্তা খনন করা হবে। তখন বুড়িতিস্তার পরিসর বৃদ্ধি পাবে এবং নাব্যতাও ফিরে আসবে।
উলিপুর ডট কমঃ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক এমএ মতিনঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনার মাধ্যমে উলিপুর ডট কমের পাঠকদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল।