|| জেলা প্রতিনিধি ||
পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে বৈধ পথে ভারতে গিয়ে করোনাভাইরাসের লকডাউনের মধ্যে দেশে ফেরার পথে প্রায় দুই মাস আগে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলায় গ্রেফতার হওয়া ২৬ বাংলাদেশী নাগরিকের মধ্যে বকুল মিয়া (৫৭) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টায় ভারতের আসাম রাজ্যের ধুরড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানা গেছে।
ধুবড়ি পুলিশ প্রধান যুবরাজ বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বুধবার সকালে মারা যান তিনি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে কয়েকদিনের মধ্যে তার মরদেহ চেংরাবান্ধা-বুড়িমারি ইমিগ্রেশন পথে বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বকুল মিয়া কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি ওই ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ব্যাপারি পাড়া গ্রামের মৃত ওমর আলীর ছেলে। গত বছর ডিসেম্বরে তিনি ভারতে যাওয়ার পর চলতি বছরের ৩ মে দেশে ফেরার পথে আরও ২৫ বাংলাদেশির সাথে তাকেও ভারতের পুলিশ আটক করে বলে তার পরিবার সূূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বকুল মিয়ার মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বরং এটি হত্যাকান্ড বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা। নিহত বকুল মিয়ার জামাতা (মেয়ের স্বামী) আব্দুল জলিল জানান, বকুল মিয়ার কোনও রোগ ছিল না। তারা বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে ভারতে গিয়ে দেশে ফেরার পথে তাকে আটকের পর নির্যাতন করা হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। নির্যাতন ও মানসিক দুঃশ্চিন্তায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছেন স্বজনরা। বকুল মিয়ার মৃত্যুর খবরে আটক অপর বাংলাদেশিদের জীবন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টদের স্বজনরা।
আব্দুল জলিল বলেন, ‘মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে আমার স্ত্রী (নিহত বকুল মিয়ার মেয়ে) ও শাশুড়ি কাঁদতে কাঁদতে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। তাদেরকে সান্তনা দেওয়ার কোনও উপায় পাচ্ছি না। এখন আমরা লাশ ফেরত চাই যেন স্বজনরা তাকে শেষ বারের মত দেখে দাফন করতে পারি।’ একই সাথে আটক অপর বাংদেশিদের মুক্তি দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ২৬ বাংলাদেশি ভারতে গমন করেন। বৈধ পাসপোর্ট ও ভ্রমণ ভিসা থাকলেও ভারতে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন চলার মধ্যে গত ২ মে ওই ২৬ জন পুরুষ বাংলাদেশি দুটি মিনিবাসে করে আসামের জোরহাট জেলা থেকে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
পশ্চিমবঙ্গের চেংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা ছিল তাদের। ভারতে জেলে ও খামারকর্মী হিসেবে কাজ করা এসব বাংলাদেশীকে পরদিন (৩ মে) সকালে বাহালপুর এলাকা থেকে আটক করে আসামের ধুবড়ি জেলা পুলিশ। করোনা পরীক্ষার পর তাদের পাঠানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। গত ৫ মে ওই ২৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং ফরেনার্স (সংশোধিত) অ্যাক্ট, ২০০৪ এবং পাসপোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৬৭’র ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাসপোর্টধারী এসব বাংলাদেশি টি-ওয়ান ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এই ভিসাধারীদের কাজের অনুমতি না থাকলেও আসাম পুলিশের অভিযোগ, এই বাংলাদেশিরা রাজ্যের জোরহাট, গোলাঘাট এবং শিবসাগর এলাকায় কর্মসংস্থান কার্যক্রমে যুক্ত থেকে ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেছেন।
উল্লেখ্য, আটক বাংলাদেশীদের মুক্তির দাবিতে কুড়িগ্রামে একাধিকবার মানববন্ধন করেন আটক বাংলাদেশির স্বজনরা।