|| মোহাম্মদ মাহদী-উজ-জামান ||
করোনা মহামারী সময়ে আমাদের জীবন ধারা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। আগে আমরা যারা অফিসে গিয়ে কাজ করতাম এখন সে কাজ বাসা থেকে রিমোটলি করছি। আগে আমরা চিকিত্সা সেবা নিতে ডাক্তারের কাছে যেতাম, এখন সে সেবা নিচ্ছি টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে। মোবাইলের মাধ্যমে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিচ্ছি। আমরা কোনো পণ্য কিনলে দোকানে গিয়ে তা কিনতাম, আর এখন তা কিনছি ই-কমার্সের মাধ্যমে। করোনা মহামারীতে সব কিছু আইটি নির্ভর হয়ে গেছে। বিশেষ করে ব্যবসাগুলো আইটিতে ট্রান্সফার হচ্ছে। এতে করে আর একটি বিষয় দেখা যাচ্ছে আর তা হলো, প্রচুর লোক চাকরি হারাচ্ছে, অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে যেসব কোম্পানি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে তারা প্রচুর লোকবল নিয়োগ দিচ্ছে। যেমন- জুম, আমাজন, ইনস্টাকার্ড, নেটফ্লিক্সসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো, তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক বড় সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্নঃ তথ্যপ্রযুক্তি খাত কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছে?
উত্তরঃ সম্ভাবনার যে দরজাগুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো তথ্যপ্রযুক্তি খাত। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা ডাটা সেন্টারে যেতে পারছি না। সেখানে যেতে হলে আমাকে করোনা মোবাবিলার সরঞ্জাম পরিধান করতে হবে, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রেখে যেতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ অবস্থায় আমাদের ক্লাউড বেজড টেকনোলজিতে যেতে হবে। আমাদের যারা তরুণ জনবল আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তাদের প্রথম কাজ হচ্ছে, ক্লাউড বেজড টেকনোলজি সম্পর্কে জানতে হবে। এরা চাইলে আমাজন, গুগল ও মাইক্রোসফটের কাজ থেকে এ অভিজ্ঞতা পেতে পারে। কারণ, এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে মার্কেট লিডার হিসেবে কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক সার্টিফিকেশন আছে, ট্রেনিং আছে। এগুলো অনলাইনে ও ইউটিউবের মাধ্যমে গ্রহণ করা যায়। এ কোর্সগুলো তরুণরা ফ্রি গ্রহণ করতে পারবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ ডলার দিয়ে কোর্স করতে হতে পারে। এই কোর্সগুলোর সুবিধা হলো— বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে গ্রহণ করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, ধরুন বাংলাদেশে বসে এ কোর্সগুলো কেউ সম্পন্ন করলে বিশ্বের যেকোনো দেশে তা কাজে লাগাতে পারবে।
প্রশ্নঃ এ অবস্থায় তরুনদের কী করণীয় ?
উত্তরঃ এ অবস্থায় তরুণদের তিনটি ক্ষেত্রে তাদের মেধা কাজে লাগাতে হবে: প্রথমত, ক্লাউড সংক্রান্ত টেকনোলজি শিখতে হবে (এটা একদম বেসিক); দ্বিতীয়ত, শিখতে হবে কীভাবে নতুন ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করা যায়; তৃতীয়ত, নতুন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। লজেস্টিক পরিবর্তনের পরিকল্পনা অনেকেই করছে। উবারের মতো প্রযুক্তি কীভাবে বাস-ট্রাক বা ট্রানপোর্টে ব্যবহার করা যায়? হেলথ কেয়ারে ব্যবহূত প্রযুক্তিগুলো যেভাবে কাজ করছে এগুলোকে কীভাবে আইটিতে স্থানান্তর করা যায়? আমাদের বুঝতে হবে, কীভাবে এ প্রসেসগুলো কাজ করে। এগুলো শিখতে সয়তা হবে ডিজাইন থিংকিং থেকে। ডিজাইন থিংকিং একটি পরিচিত ও ভালো ম্যাথোড। এমআইটি, স্ট্যামফোর্ট, এসএপিএসহ বড় বড় ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে শিখতে পারা যাবে। এছাড়া ইউটিউবে তো ফ্রি রয়েছেই। মূল কথা হলো- কাজটা আমাদের ভালোভাবে বুঝতে হবে।
প্রশ্নঃ কোন ধরনের টেকনোলজি শিখলে আমাদের বেশি কাজে লাগবে?
উত্তরঃ আমাদের প্রথমে ক্লাউডের বেসিক সার্টিফিকেশনগুলো শিখতে হবে। তারপর কী জিনিস দিয়ে আমরা এটিকে তৈরি করবো তা জানতে হবে। সার্ভারলেস টেকনোলজি সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে।
সার্ভারলেস প্রযুক্তির বিশেষ সুবিধা হলো- এটি শুরু করতে তেমন কোনো খরচ নেই। সার্ভার টেকনোলজিতে আপনি যদি একজন গ্রাহকের জন্য সার্ভিস চালু করতে চান তাহলে সার্ভারের জন্য এপ্লিকেশন বানাতে হবে এবং সার্ভার রান করার জন্য খরচ করতে হবে। সার্ভারলেস টেকনোলজিতে এমন কোনো খরচ নেই। আমাজন, গুগল বা মাইক্রোসফটে প্রথম ১২ মাস আপনাকে কোনো খরচ গুণতে হবে না। অধিক স্টোরেজের জন্য হয়তো আপনাকে কিছু প্রদাণ করতে হতে পারে। আর একটি প্লাস পয়েন্ট হলো— এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে আমাদের অনেক সময় বেঁচে যাবে। সার্ভার টেকনোলজিতে আপনাকে এপ্লিকেশনের সাইজ, স্টোরেজ ক্যাপাসিটি, সার্ভার নিয়ে চিন্তা করতে হবে যা সার্ভারলেস টেকনোলজিতে প্রয়োজন নেই। সার্ভার টেকনোলজির চেয়ে সার্ভারলেস টেকনোলজিতে ১০ ভাগের ১ ভাগ টাকা খরচ হবে। এজন্য ই-কমার্স বা অন্য কোনো ছোট বিজনেসকে সার্ভারলেস টেকনোলজিতে রুপান্তর করতে হবে। বর্তমান সময়ে তরুণদের জন্য এটি একটি অনেক বড় সুযোগ। এ মার্কেট ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। এখান থেকে যদি কিছু অংশ বাংলাদেশের তরুণজের জন্য আনা সম্ভব হয় তাও আমাদের অনেক বড় সুযোগ হবে।
করোনা পরিস্থিতি বা এর পরবর্তী সময়ে অবশ্যই সবাইকে ক্লাউডে প্রবেশ করতে হবে। খরচ কম হওয়াতে আগামীতে সবাই এ প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে আসবে। ডাটা প্রাইভেসি, ডাটা সিকিউরিটি, অবকাঠামো কন্ট্রোল নিয়ে মানুষের মনে ভয় ছিল অহেতুক। আমাদের দেশের তরুণদের সার্ভারলেস টেকনোলজিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
লেখকঃ সলুশন্স আর্কিটেক্ট, আমাজন; প্রতিষ্ঠাতা, ক্লাউড ক্যাম্প, বাংলাদেশ।
শ্রুতিলিখনঃ মাহবুব শরীফ
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক