।। সুভাষ চন্দ্র ।।
উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যার পানি ভাসিয়ে দিয়েছে নদীর তীরবর্তী গ্রাম ও চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। আর এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে উপজেলার অন্তত ১০ হাজার মানুষ। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যাকবলিত এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের মৌসুমী ফসল ও সবজি ক্ষেত। এসব অঞ্চলের মানুষ কলাগাছের ভেলা এবং স্থানীয় নৌকায় করে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে করোনায় কর্মহীন মানুষের মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে বন্যা আর নদী ভাঙ্গন। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে এ পর্যন্ত ৩ শতাধিক পরিবারের ভিটা বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্রের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আসাম সংলগ্ন সীমান্তবর্তী মেকুরের আলগা গ্রামের পানিবন্দি আক্কাস আলী মোবাইল ফোনে জানান, তার গ্রামসহ দই খাওয়ার চর, আইরমারীর চর, গাঙচিলের চর ও মাঝের আলগা চরের প্রায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি ২ দিন ধরে পানিতে ডুবে আছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে, অনেকে খাবার পানি পাচ্ছে না। কিছু কিছু পরিবারের কাছে চিড়া, মুড়িসহ শুকনো খাবার থাকলেও অধিকাংশের ঘরে তা নাই। এই পরিবারগুলো, চরে চাষ করা কুমড়া সিদ্ধ, মিষ্টি আলু সিদ্ধ খেয়ে দিন পার করছেন। বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না-বান্না করাও কঠিন হয়ে পড়েছে ।
উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বি এম আবুল হোসেন জানান, তার এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন নতুন এলাকায় পনি ঢুকে পড়ায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে, গাবুরজান, কামারটারি, চর গুজিমারী, চর দাগারকুটি, নীলকন্ঠ, কমদমতলা ও অনন্তপুর বাজারের কিছু অংশ।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল কাদের জানান, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। হাতিয়া, সাহেবের আলগা ও থেতরাই, বজরা ও দলদরিয়া এলাকায় বহু ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৪৮ মেট্রিকটন চাল শুকনা খাবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ও শিশু খাদ্যের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা এখনো বিলি বন্টন শুরু হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, সব কথটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় আগামী ৫ থেকে ৭ দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বেশি ভাঙ্গন কবলিত কিছু এলাকায় জিও টেক্সটাইলের বালু ভতি ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলা হচ্ছে বলে জানান। কিন্তু বাস্তবে জরুরী রোধে জরুরি কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা জানায়, নয়টি উপজেলায় বন্যা মোকাবিলার জন্য ২৮২ মেট্রিকটন চাউল ও শুকনো ও শিশু খাদ্যের জন্য ২৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল করিম জানান, বন্যা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।