।। চন্দন কুমার সরকার ।।
পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ভারতের আসাম প্রদেশের ধুবড়ি জেলার চাপোবত থানায় আটক ২৬ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত চেয়ে মানববন্ধন করেছেন আটকদের পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী। মঙ্গলবার (২৩ জুন) দুপুরে জেলার চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ব্যাপারী পাড়া গ্রাম থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসে কুড়িগ্রাম শহরের কলেজ মোড়ে এ মানববন্ধন করেন আটক বাংলাদেশিদের পরিবারের সদস্যরা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আটক বাংলাদেশিদের স্বজনরা দাবি করেন, ভারতে আত্মীয়দের বাড়ি থাকায় কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ব্যাপারী পাড়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা ভ্রমণ ভিসা নিয়ে ভারতে বেড়াতে যান। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ভারত জুড়ে লকডাউন শুরু হয়। কিন্তু গত ৩ মে কিংবা তার পরদিন চেকপোস্ট কয়েকঘন্টার জন্য খুলে দেয়া হবে এমন খবরে বেড়াতে যাওয়া বাংলাদেশিরা জোড়হাট থেকে ধুবড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেদিন ছিল ভারতে দ্বিতীয় দফা লকডাউনের শেষ দিন। লকডাউনে বাইরে বের হওয়ায় গত ৩ মে ২০২০ তারিখ চাপোবৎ থানা পুলিশ তাদের আটক করে। পরে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানে তারা বন্দি রয়েছেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া চিলমারীর বাসিন্দা নাহিদ হাসান বলেন, ‘ইতিহাসে রাষ্ট্র ভাগ হয়েছে, কিন্তু আত্মীয়তাতো ভাগ হয়নি। ফলে আমাদের নিয়মিতই ভারতে আসা-যাওয়া করতে হয়। ওপারের আত্মীয়রা আসেন, আমরাও যাই। পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে চলাচল চলে। বংশপরম্পরায় জেলে হওয়ায় বেড়াতে গিয়ে অবসরে মাছ শিকার করেন কেউ কেউ। তাদের রক্তের মধ্যে আছে মাছের গন্ধ। ফলে এটাকেই কেউ কেউ বলেন, ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে কর্ম করা। কিন্তু এ কারণে পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে ভারতে যাওয়া ওই দরিদ্র মানুষগুলোকে কারাগারে আটক রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন। আটক বাংলাদেশিদের পরিবারের সদস্যরা এপারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রাষ্ট্রের উচিত তার নাগরিকদের ফেরত আনার ব্যবস্থা করা, আমরা মানববন্ধন থেকে সেই দাবি জানাই।’
ভারতে আটক মানিক ও রেজাউলের মা মালঞ্চ বেগম বলেন, ‘আটক ছেলেদের ফেরত আনি দেও। ওমাক ছাড়া বাঁচি কেমন করি, খুব কষ্টে আছি বাবা! সরকার যেন একটু দয়া করে।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্বজনরা জানান, ভারতের হাজতে থাকা অবস্থায় আটক বাংলাদেশিদের কারও কারও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। বতর্মানে তাদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্বজনরা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের কারা বন্দিত্বের কারণে এপারে তাদের স্বজনরা খেয়ে না খেয়ে দিনানিপাত করছেন। এমতাবস্থায় আটক স্বজনদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।