|| চন্দন কুমার সরকার ||
পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিমখানে যমুনা টেলিভিশনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি নাজমুল হোসেনসহ অপর দুই সহকর্মীর উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুরে ওই এলাকার বাসিন্দা ও বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার ওসি হিসেবে কর্মরত খলিলুর রহমান ও তার কয়েকজন সঙ্গী এ হামলা চালায় বলা জানা যায়। এ সময় ছিনিয়ে নেয়া হয় ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন। ন্যাক্কারজনক এ হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবসহ কুড়িগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এ ঘটনায় খলিলুর রহমানসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০/১২ জনের নামে রাজারহাট থানায় একটি এজাহার দায়ের করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, যমুনা টিভি ও জাগো নিউজ ২৪ ডটকম এর কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি নাজমুল হোসেন, রেডিও চিলমারীর জেলা প্রতিনিধি ভুবন কুমার শীল ও ক্যামেরা পারসন কবির হোসেন শনিবার সকালে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও নাজিমখান ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত তিস্তা নদীর তথ্য সংগ্রহ করতে যান। দুপুর ২টার দিকে তাঁরা ফেরার পথে নাজিমখান ইউনিয়নের মনারকুটি মৌজাস্থ একটি ছ-মিলের সামনে পাকা রাস্তায় স্থানীয় লোকমুখে জানতে পারেন, একই এলাকার খলিলুর রহমান ও শামসুন্নাহার গং-এর মধ্যে জমিজমার বিরোধ নিয়ে সালিশ বৈঠক চলছিল। সালিশ বৈঠকটি শেষে স্থানীয় সকলেই রাস্তায় চলে আসে। ভীড় দেখে সেখানে উল্লেখিত সাংবাদিকগণ দাঁড়ালে বিরোধপূর্ণ একটি পক্ষের লোকজন হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ সময় আসামী খলিলুর রহমান লাভলু (৪৫) পিতা: মৃত: আব্দুল আজিজ পাটোয়ারী ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক ও ক্যামেরা পারসনের দিকে তেড়ে যান। আসামী খলিলুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপূর থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। এ সময় তার প্রত্যক্ষ মদদে অপর আসামী পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের আব্দুস সালাম পঞ্চায়েতের দুই পূত্র সোহেল (৩৫) ও কোয়েল (৩৮), আফতার আলীর পূত্র আক্কাছ আলী (৩৫), রাজারহাট মল্লিকবেগ এলাকার মাজহারুল ইসলামের পূত্র সেতু মিয়া (৩০), দলদলিয়া কাজী পাড়ার মৃত: মহুবর রহমানের পূত্র লুৎফর রহমান, রাজারহাট মনারকুটি এলাকার মৃত: জমসেদ আলীর পূত্র মাসুদ মিয়া (২৪), নাজিমখান তেলি পাড়ার করিম বকসের পূত্র রেজা (৩২)সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন আসামী সংঘবদ্ধভাবে হাতে লাঠিসোটা, রড, ছোড়া নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালায়। এ সময় ২নং আসামী সোহেল দুই হাত দিয়ে ক্যামেরা পারসন কবির হোসেনের গলা চেপে ধরে নাজমুল হোসেন ও ভুবন কুমার শীলের উপর অপর আসামী ও অজ্ঞাতরা লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাথারী মারপিট করতে থাকে। এসময় তাঁদের ক্যামেরা ও মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়। পরে সেগুলো উদ্ধার করা হলেও ২টি মেমোরী কার্ড তারা সঙ্গে রেখে দেয়। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন প্যাকেজ সংরক্ষিত ছিল।
রোববার সন্ধ্যায় ক্যামেরা পারসন কবির হোসেন বাদি হয়ে রাজারহাট থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। জানা যায়, আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলায় বাঁধা দিতে বিভিন্ন দেনদরবারসহ আমাদের কিছুই করতে পারবে না বলে দম্ভ করে বেড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু ও সাধারণ সম্পাদক খ.ম আতাউর রহমান বিপ্লবের মন্তব্য জানতে চাইলে তাঁরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক। সাংবাদিকদের উপর এ বর্বর হামলা মেনে নেয়া যায় না। ইতিমধ্যেই হামলার শিকার সাংবাদিক ও ক্যামেরা পারসনকে নিয়ে রোববার দুপুর ১২টায় কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়াও ক্যামেরা পারসন কবির হোসেন বাদি হয়ে রাজারহাট থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছেন। আসামীদের গ্রেপ্তার করা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এজাহার পাওয়ার কথা স্বীকার করে রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ রাজু সরকার জানান, ঘটনার তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।