।। আব্দুল মালেক ।।
উলিপুরে ব্রহ্মপূত্র ও তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী অববাহিকার বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সেইসাথে চরাঞ্চলে চাষাবাদ করা বাদাম,পাট, ভুট্টা, মরিচক্ষেত ও বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপূত্র নদের অব্যাহত ভাঙ্গনে বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পাউবো কর্তৃপক্ষ ব্রহ্মপূত্র নদের ভাঙ্গন ঠেকাতে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পালের ভিটা ও হাতিয়া গ্রামে বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং করছেন। কিন্তু তিস্তা নদীর ভাঙন রক্ষায় কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের পাঁকার মাথা নামকস্থানে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে বান্ডাল তৈরি করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। এদিকে তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর ও আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে।
সরজমিনে রবিবার ভাঙ্গন কবলিত উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের পাঁকার মাথা নামকস্থানে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ বাঁশ দিয়ে বান্ডাল তৈরি করে ভাঙ্গন রোধে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এসময় জয়নাল নামের একজন স্বেচ্ছাসেবকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভাঙ্গন রোধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। অবশেষে নিজেরাই এলাকায় বাঁশ সংগ্রহ করে বান্ডাল তৈরি করে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার ও এলাকাবাসীর দেয়া আর্থিক সহযোগীতায় বাঁশ-রশিসহ বিভিন্ন উপকরণ কিনে কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, চার দিন ধরে ২৫-৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী বান্ডাল তৈরি কাজ করছেন।
শিক্ষার্থী কিবরিয়া, সবুজ, সেলিম ফিরোজ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ। তাই আমাদের একটু পরিশ্রমে যদি এলাকার ভাঙ্গন ঠেকানো যায়, তাহলে আমরা নিজেকে গর্বিত মনে করবো।
এসময় সাহালাম, শফিকুল, নুরআমিন, আনোয়ার আলী, কাউয়ুমসহ অনেকেই জানান, ভোট আসলে নেতারা আসেন, ভাঙ্গনরোধে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, আমাদের সবকিছু বিলিন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নেতারা আর আসেন না। হয়তো রক্ষা করতে পারবো না, তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি।
জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ব্রহ্মপূত্র ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল গুলো তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের দড়ি কিশোরপুর গ্রামের চাঁদ মিয়া জানান, তিস্তার জেগে উঠা জুয়ানসাতরা চরের ৫০ শতক জমির বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। কোন রকমে পানির নিচ থেকে অবশিষ্ট কিছু বাদাম সংগ্রহ করে বাড়িতে এনেছি। এছাড়া ওই গ্রামের কৃষানি মোর্শেদা বেগম, রওশনারা বেগম, কৃষক নজরুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, তিস্তার জেগে উঠা চরে তাদের বাদাম, পাট, ভুট্ট্রা, মরিচক্ষেত ও বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার বলেন, ভাঙনরোধে এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে বান্ডাল তৈরিতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে যাচ্ছেন। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রক্ষায় অস্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজের প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন হলে যতদ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করা হবে।