।। আব্দুল মালেক ।।
উলিপুরে অজ্ঞাত রোগে প্রতিদিন অসংখ্য গরু আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগ দ্রুত এলাকার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ায় গৃহস্থরা তাদের গবাদি পশু নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছে। ঈদের আগ মুহূর্তে এমন রোগের প্রার্দুভাবে খামারিরাও দুশ্চিন্তায় রয়েছে। এ রোগের সুনিদৃষ্ট কোন চিকিৎসা না থাকায় লক্ষণ দেখে চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছে। এতে করে গরু সুস্থ হতে প্রায় ৭ দিন থেকে ২০ দিন সময় লাগছে বলে গৃহস্থরা জানিয়েছে। প্রাণি সম্পদ বিভাগ অবশ্য এ রোগকে “লাম্পি স্কিন ডিজিজ” (এলএসডি) বলে সঙ্গায়ীত করছে। ইতিমধ্যে উপজেলায় এ রোগে ৫ শতাধিক গরু আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে এ রোগে ৭ দিন বয়সের একটি বাচুর সহ ২টি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার গৃহস্থ পরিবারের লালন-পালন করা গরু এ অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হতে থাকে। প্রথমে গরুর শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় পরে সম্পূর্ন শরীর গুটি গুটি হয়ে ফুলে যায়। এরপর শরীরের কোন কোন স্থানে গুটি ফুটে গিয়ে এক ধণের ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত এসব গরুর জ্বরের সাথে নাক ও মুখ দিয়ে লালা বের হয়। এ সময় গরুর খাদ্য গ্রহনে অনিহা দেখা দেয়।
উপজেলার রামদাস ধনিরাম গ্রামের কৃৃষক রোস্তম আলী জানান, তার একটি গাভী ও ৩ টি বকনা বাছুরের হঠাৎ শরীর ফুলে গুটি গুটি হয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় দ্রুত ডাক্তার নিয়ে আসলে তিনি জানান, এটি এক ধরনের ভাইরাস রোগ। যাকে আমরা ডাক্তারী ভাষায় বলি “লাম্পি স্কিন ডিজিজ”। চিকিৎসা শুরু করতে করতে তার একটি বাছুর গরু মারা যায়। ডাক্তারের দেয়া ইনজেকশন পুশ করায় বাকি ২ টি গরু প্রায় ২ সপ্তাহ আক্রান্ত থাকার পর সুস্থ হয়। তার এক-একটি গরুর পিছনে ২ হাজার ৬’শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়ের শেখের খামার গ্রামের আয়শা বেগমের ৭দিনের একটি বাচুর চিকিৎসা শুরুর আগেই এ রোগে মারা গেছে।
এছাড়াও এ অজ্ঞাত রোগে পৌরসভার তেঁতুলতলা গ্রামের নুর ইসলামের একটি গাভী, মুন্সিপাড়া গ্রামের সুমন মিয়ার একটি গাভী, তবকপুর ইউনিয়নের কালিরপাঠ গ্রামের জগদীশ চন্দ্র বর্মনের একটি গাভী, থেতরাই ইউনিয়ের হোকডাঙ্গা গ্রামের ফজলুল হকের একটি ষাঁড়, হাতিয়া ইউনিয়নের নতুন অনন্তপুর গ্রামের সাজু মিয়ার একটি গাভী ও একটি বাছুর, গুনাইগাছ ইউনিয়নের গাবের তল গ্রামের মোকছেদ আলীর একটি বাছুর, রাজবল্লভ গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের একটি ষাঁড় আক্রান্ত হলে তারা উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসে চিকিৎসা নিয়ে গরু সুস্থ করে। এদের সকলেই ৪০ টাকার ইনজেকশন ২৫০ টাকা থেকে ৩’শ টাকায় কিন্তে বাধ্য হয় বলে অভিযোগ করেন। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা সহ সর্বত্রই এ রোগ ছডিয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। আক্রান্ত এসব গরু নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে গৃহস্থরা। একে করোনা ভাইরাসের অনিশ্চিয়তা এর উপর গরুর অজ্ঞাত রোগে দিশেহারা করে ফেলেছে তাদের। এ রোগের নিদিষ্ট কোন প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় দ্রুত এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার পরামর্শ দিচ্ছে। তারা বলছে আক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুকে নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে। যাতে করে আক্রান্ত গরুর গায়ে পড়া মশা বা মাছি সুস্থ গরুকে স্পর্শ করতে না পারে। এজন্য প্রয়োজনে মশারী ব্যবহার করতে হবে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ও ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ তানভীক জাহান বলেন, ‘গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন ডিজিজ যেহেতু মশা-মাছি থেকে ছড়ায়। সেজন্য আক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গবাদি পশুগুলো আলাদা করে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে গবাদি পশু থাকার জায়গা সবসময় শুকনো রাখাসহ মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে খামারি ও কৃষকদের।