|| চন্দন কুমার সরকার ||
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। গত কয়েকদিনের নদী ভাঙ্গনে বসতভিটার পাশাপাশি ফসলি জমিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয়রা বাঁশের খুটি গেড়ে গাছের ডাল ফেলে পাইলিং দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিন শনিবার (২০ জুন) দুপুরে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গিয়ে জানা যায়, উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত থেতরাই ইউনিয়নের দড়ি কিশোরপুর গ্রামে গত এক সপ্তাহে নদীর ভাঙ্গনের ফলে প্রায় ৩০টি পরিবার তাঁদের বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে ওই এলাকায় ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে অর্ধশত বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ চলাচলের রাস্তা। ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেতে বাড়ি ঘর সরিয়ে নিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুজ্জামান (৪০), চাঁদ মিয়া (৫০), মঞ্জু মিয়া (৪৫), ছকিনা (৬৫), রুহুল আমীন (৬০), আম্বিয়া বেওয়া (৪০), রফিকুল (৫০), আনোয়ারা বেওয়া (৬০), মর্জিনা (৬৫), আতিয়ার (৪৫), আব্দুর রহমান (৭৫), মরিচা (৪০), বদিয়াল (৬৫), সফিকুল (৪৫), সাহেরা বেওয়া (৬০), রমনা (৩০), রাবেয়া (৬০), কাজলী (৩৫) সহ অনেকেই। তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে থেতরাই ইউনিয়নের দড়ি কিশোরপুর, নগর পাড়া, হোকডাঙ্গা গ্রামের মাষ্টারপাড়া, মাঝিপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, দালালী পাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে। স্থানীয়রা বাঁশের খুটি গেড়ে গাছের ডাল ফেলে পাইলিং দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ওই এলাকার ইউপি সদস্য আঃ হালিম সরকার জানান, গত এক সপ্তাহের ভাঙ্গনে ইউনিয়নের ৪,৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে নদীর পাড়ের অনেক বাড়িঘর ও বসত ভিটার জায়গা জমি তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, নদী অনেক দুরে ছিল, হঠাৎ গতি পরিবর্তন করায় ভাঙ্গন শুরু হয়। এ পর্যন্ত এলাকার প্রায় ৫০টি বাড়িঘর বসত ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগনকে বিষয়টি অবগত করেছি।
এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে হাতিয়া গ্রাম, নয়াডারা, নীলকন্ঠ গ্রামসহ আশপাশের এলাকার গত দুই মাসে শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।
থেতরাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে পাইলিং করার জন্য স্থানীয়দের ব্যক্তিগত ভাবে আর্থিক সহযোগিতা করেছি। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণকে নদী ভাঙ্গনের ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।