|| আতিক মেসবাহ লগ্ন ||
কুড়িগ্রাম জেলার কৃতি সন্তান হায়দার বসুনিয়া। তিনি একাধারে একজন কবি ও ঔপন্যাসিক। স্বনামধন্য এই লেখক ১৯৩৯ সালের ৩০শে নভেম্বর কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিম খান ইউনিয়নের মনারকুঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে পেশা হিসেবে বেছে নেন শিক্ষকতা। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাহিত্যাঙ্গনে মনোনিবেশ করেন। তিনি প্রায় ৫০টি উপন্যাস, ৭টি নাটক ও ৬টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন।
এপ্রিলের ২৯ তারিখ। গন্তব্য তখন নিভৃতচারী লেখক হায়দার বসুনিয়ার বাড়ির দিকে। লক্ষ্য একটাই তাঁর করোনাবন্দী দিনগুলো আলাপচারিতায় ফুটিয়ে তোলা। বাজারের বুক চিরে সোজা পশ্চিম দিকে ছুটে চলেছে গ্রামের আকাঁ-বাঁকা মেঠো পথ। সুর্য তখন মাথার উপরে মেঘের সাথে লুকোচুরিতে নিমগ্ন।
বাজার থেকে মোটরবাইকে মিনিট পাঁচেক পথ যেতেই চোখে পড়ল একটা বিশাল প্রবেশদ্বার। বড় করে লেখা “পন্ডিত বাড়ি”। হর্ণ বাজাতেই বেরিয়ে আসলেন তাঁর ছেলে। ভিতরে ডাকলেন। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেই প্রবেশ করলাম ভিতরে।
বাড়ির পশ্চিম দিকে একটা ঘরে তিনি থাকেন। ঘরেই তৈরি করেছেন বইয়ের সংগ্রহশালা। বয়সের ভারে জীবন যেন মোড় নিয়েছে ভিন্ন পথে। তবুও মাথা দেওয়ার বালিশটার পাশে দেখলাম তিনটি বই। ছেলের হাত ধরে উঠে বসলেন।
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম স্যারের দিকে। এই নিভৃত গ্রামে, প্রকৃতির সাথে নিবিড়ভাবে থেকেই তো তাঁর কতো সৃষ্টিশীল লেখা পাঠকদের তেষ্টা মিটিয়েছে।
উলিপুর ডট কমের পক্ষ থেকে এসেছি বলেই কথা শুরু হয় তাঁর সাথে। একান্ত এই সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
প্রশ্নঃ (সালাম দিয়ে জানতে চাইলাম) আপনি কেমন আছেন?
হায়দার বসুনিয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো বাবা?
প্রশ্নঃ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও ভালো আছি। আপনার ছেলের কাছে জানতে পারলাম আপনি দু’দিন অসুস্থ ছিলেন?
হায়দার বসুনিয়াঃ বিদ্যুতের শক খাওয়ার কারণে দুদিন অসুস্থ ছিলাম। উঠে বসতেই পারতাম না। এইতো আজ এখুনি বসলাম।
প্রশ্নঃ দেশে করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে আপনার সময় কিভাবে কাটছে?
হায়দার বসুনিয়াঃ আমি এই ঘর আর মসজিদেই বেশিরভাগ সময় পার করি। আমার খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।
প্রশ্নঃ দেশের এই পরিস্থিতিতে সাহিত্যচর্চায় কি ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
হায়দার বসুনিয়াঃ যেহেতু ঘরে বসে থাকা ছাড়া কাজ নেই। তাই সাহিত্যচর্চা খানিকটা হলেও প্রাণ ফিরে পাবে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্নঃ বর্তমান সময়ের তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে তিনটি পরামর্শ জানতে চাই।
হায়দার বসুনিয়াঃ “বর্তমানে তরুণদের প্রেক্ষাপট আগের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন সবাই কল্পনা নির্ভর লেখায় ব্যস্ত। সবাইকে আগে ভালো মানুষ হতে হবে। সঠিক ইতিহাস জানতে হবে, দেশপ্রেমিক হতে হবে।” – তিনি খুব সাবলীলভাবে কথাগুলো বললেন।
প্রশ্নঃ তরুণদের উদ্দেশ্য আপনার কোন বক্তব্য আছে?
হায়দার বসুনিয়াঃ আমার পাঠকরা যেন আমার লেখাগুলো পড়ে ভালো দিকগুলো গ্রহণ করে। দেশের অবস্থা ভালো না তাই সবাই যেন মুখে মাস্ক পড়ে আর ঘরে বসেই ইবাদত করে।
সংক্ষিপ্ত এই সাক্ষাৎকার এখানেই শেষ হয়েছিল। বেলা তখন ৩টা বাজে। বিদায় নিয়ে, স্মৃতি আর স্বপ্ন ‘দুচোখে আর হৃদয়ে’ ভরে নিয়ে ফিরে এলাম তার কাছ থেকে।
কিছুক্ষণ আগেও কাটানো সময়টুকু যেন ভুলতেই পারছি না। নিঃসন্দেহে তার সাথে ক্ষুদ্র এই আলাপচারিতা আমার জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেনঃ আতিক মেসবাহ লগ্ন – সহ-সম্পাদক, উলিপুর ডট কম ও ছাত্র, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।