|| জাহাঙ্গীর আলম সরদার ||
সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামে করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় শুরু থেকেই জেলার পুলিশ বাহিনী তৎপর হয়ে উঠেন। কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খাঁন এর নির্দেশে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করছেন। বিদেশ ফেরত মানুষজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিটি পুলিশ সদস্য। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন করা হলে সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। ফলে অনেকেই খাদ্য সংকটে পড়ে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ থেকে বৃদ্ধ বয়সের মানুষেরা অভাবনীয় খাদ্যকষ্টে দিন কাটাতে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খাঁন ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে পুলিশ বিভাগের সদস্যদের মাধ্যমে এসব খাদ্য সংকটে থাকা মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। হরিজান সম্প্রদায়ের কর্মহীন পরিবারসহ খাদ্য সংকটে থাকা বিভিন্ন পেশার মানুষকে এ খাদ্য সহায়তা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় শিক্ষার উন্নয়নসহ মানবিক কাজ করে প্রশংসিত হয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়েও মানুষকে সাহস যোগাচ্ছেন। আশার কথা, প্রথম ধাপের পরবর্তী পরীক্ষায় তাঁর নেগেটিভ ফলাফল এসেছে। আমরা কুড়িগ্রামবাসী তার দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করছি। কুড়িগ্রামের উলিপুর অঞ্চলের সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে ঢাকা র্যাব-২ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত। করোনাভাইরাসের শুরু থেকে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতসহ খাদ্য সংকটে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। যা ওনার ফেসবুকে পেজে দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান উলিপুর অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করার সময় এ অঞ্চলের প্রতিবন্ধি শিশুদের নিয়ে কাজ করে সাধুবাদ পেয়েছিলেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের শুরু থেকে ওনার ফেসবুক পেজে মানবিক সহায়তার পোষ্ট গুলো অনেকের মতো আমাকেও দারুনভাবে নাড়া দিয়েছে। বিষয়গুলো ব্যক্তিগত প্রশংসার জন্য বলছি, তা নয়। করোনাভাইরাসের কারনে সারাদেশে আমরা এক মানবিক পুলিশকে দেখতে পারছি। যা আমরা দীর্ঘদিন ধরে আশা করে আসছি। পুলিশ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই নেতিবাচক ধারনা আছে। সে নেতিবাচক ধারনা যে শেষ হয়ে গেল, তা কিন্তু বলছি না। আজকের এ করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব ঠেকানো যুদ্ধের বাস্তব প্রেক্ষাপটে পুলিশ সত্যিই মানবিক আচরণ করছেন। সেটার জন্য অবশ্যই আমরা সাধুবাদ জানাতে পারি।
করোনাভাইরাস সংক্রমনের শুরু থেকে বিদেশ ফেরতদের অবস্থান সনাক্ত করে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর সদস্যবৃন্দ করোনা লড়াই শুরু করেন। এরপর করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে পাঠানো থেকে লকডাউন নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যবৃন্দ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। জনগনের সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতকরণসহ মানবিক সাহায্য করছেন পুলিশ সদস্যরা। করোনা আক্রান্ত কোন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাদের নিকটাত্মীয়রাও দাফন কার্যে এগিয়ে আসেন না। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা মৃত ব্যক্তির দাফনের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন।
সম্প্রতি বোরো ধান পাকা শুরু হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিক সংকট দেখা দিলে মাননীয় প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ কৃষি বিভাগ উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষি শ্রমিক সংগ্রহ করে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ যাতায়াতের যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন। এক্ষেত্রেও পুলিশ বিভাগ দায়িত্বশীল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে পুলিশ সদস্যদের সরাসরি সাধারণ জনগনসহ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে। এ কারনে অনেক পুলিশ সদস্য ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা বিশেষ করে পুলিশের কনস্টেবল পদমর্যদার সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খাঁন এর খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন মানবিক কর্মকান্ডের বিষয়ে উলিপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা দিনরাত করোনা মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছি। খাদ্যকষ্টে থাকা অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। করোনা বিষয়ে পুলিশের কোন ট্রেনিং নেই, তবুও মানুষের স্বাভাবিক জীবন রক্ষায় সামজিক দুরত্ব রক্ষা করতে পুলিশ সবসময়েই মাঠে আছেন। দিনরাত জীবনের ঝুকি নিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে ঘোষনা করা হয় “মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার”। করোনাভাইরাসের কারনে কর্মসূচি শিথিল করা হলেও পুলিশ মানবিক আচরণ দিয়ে জনতার হয়ে উঠেছেন। আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে নতুন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ঘোষনা করেছেন পুলিশ বাহিনীকে জনতার বন্ধুতে পরিনত করবেন। বাস্তবতার নিরিখে পুলিশের ভুমিকা অনেকটা সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। আর এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে পুলিশ বাহিনী এদেশের মানুষের সত্যিকার বন্ধুতে পরিনত হবেন। তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন আসবে। সাধারণ মানুষ তাদের কাঙ্খিত সেবা পাবে। পুলিশ বাহিনীর উপর দীর্ঘদিনের নেতিবাচক ধারনা পাল্টিয়ে ইতিবাচক ধারনার সৃষ্টি হবে। আসুন সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করি। সুস্থ থাকি।
লেখকঃ জাহাঙ্গীর আলম সরদার, সাংবাদিক ও সহকারী অধ্যাপক, উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী স্কুল এন্ড কলেজ, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।
(বিঃদ্রঃ প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।)