|| জয়নাল আবেদীন ||
উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের রামেসশ্বর্মা, বোতলা, দলন, আঠারো পাইকা ও সাতভিটা মৌজা মিলে বৃহত্তর যে বিলটি তার নাম হিঞ্জুলীর দোলা। আয়তনে বৃহৎ হওয়ার কারণে এটিকে আবার ছোট ছোট ভাগেও বিভক্ত করে বিভিন্ন নামে ডাকেন স্থানীয়রা। যেমন- ডারকামারী, কুশসা, সিংগিমারী ইত্যাদি। একসময় বৃহৎ এ বিলের অধিকাংশ জমি পতিত থাকতো জলাবদ্ধতার কারনে। ১৯৭৮-৭৯ সালে বাংলাদেশ সরকার এই ইউনিয়নের চকচকা দোলা থেকে বর্তমান কামার পাড়ার ব্রিজ হয়ে বোতলা দিয়ে দলন মৌজা হয়ে রামেশ্বাসশর্মা, সাতভিটা ও আঠারো পাইকা মৌজার উপর দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন বা ক্যানেল খনন করে সংযোগ স্থাপন করে দেয় ধরলার সাথে। ফলে পতিত জমিগুলোতে ফলতে থাকে সোনার ফসল। আশায় বুক বাধেন সাতভিটা, আঠারো পাইকা, হাপার ভিটা, দলবাড়ী, মোল্লা পাড়া, দলন, বকসীগঞ্জ ও বোতলা গ্রামের মানুষগুলো। তবে দীর্ঘদিন ড্রেনটির পূর্ণ খনন বা সংস্কারের অভাবে ভরাট হয়ে যায় ।
এবার আর জলাবদ্ধতার কারনে নয়, মুক্ত জলের কারনেই উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে প্রবল বৃষ্টি হলেই ভরে যাচ্ছে ধরলা। সেই জলেই টইটুম্বুর হচ্ছে হিঞ্জুলীর বুক। কারণ, যত দ্রুত গতিতে পানি ঢুকে পড়ে তত দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে না ড্রেনের তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে। দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করা এই মানুষগুলোর কপালে আবারো হাত পড়ে, যখন আশ্বিনের আমন ধানের কচি পাতাগুলো উদর ভরে খেয়ে যাচ্ছে এই বৃষ্টির পানিগুলো।
বর্তমান সরকার চলতি বছরের শুরুতেই এই ড্রেন খননের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। হতাশাগ্রস্ত কৃষকরা স্বপ্ন দেখেন আশ্বিনের নিম্নচাপের (বৃষ্টির) দিনগুলোতে এবার আর তাদের ফসল নষ্ট হবে না। কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের এ স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে থাকে। তাদের স্বপ্ন ধুলিসাতের কারণ হচ্ছে ড্রেনের পূর্ব পাশের মানুষের অধিকাংশ জমি ড্রেনের পশ্চিম পার্শ্বে। আর বিলটি বৃহৎ হওয়ায় কাছাকাছি কোথাও রাস্তাও নেই। সাধারণত ইরি ধানের মৌসুমে তাদের ধান বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হতো ড্রেনের উপর দিয়েই। কিন্তু এবার ড্রেনের পাড়ে দাঁড়ালে মনে হয় পাড় থেকে ২০/২২ ফিট নিচু এবং সেখানে পানি থাকায় কিভাবে তারা ধানের বোঝা বয়ে বাড়ীতে আনবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। আর তাই তারা স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় ড্রেনের পাড়ের কিছু মাটি কেটেকুটে কোন রকমে রাস্তা তৈরি করে বাড়ীতে ধান আনবে।
কয়েকজন কৃষককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাতে আপনাদের আগামি আমনের মৌসুমে ক্ষতি হবে না? উত্তর দিয়েছেন, সরকার ড্রেন দিলে তা পারাপারের জন্য ব্রিজ দেবেনা কেন? ক্ষতি হলেই বা কি করবো উপায় না থাকলে ধান তো আনতে হবে।
এ প্রকল্পটির সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নজরদারি ও পারাপারের জন্য ব্যবস্থা করতে পারলেই এই হুমকির মুখ থেকে মুক্তি পেতে পারে এই ড্রেনটি।