।। নিউজ ডেস্ক ।।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের নিয়মগুলো আমরা সবাই মোটামুটি জানি। যেমনঃ বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, ৩ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা, মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। এই নির্দেশনাগুলো অবশ্যই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে মানুষ এসব নির্দেশনা কতটুকু সঠিকভাবে মানছে বা আদৌ কত দিন মেনে চলতে পারবে, তা বলা মুশকিল।
আসন্ন দিনগুলোয় আমাদের অনেকেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারি। তাই আমাদের এখন ভাবতে হবে, যদি আমরা এ রোগে আক্রান্ত হই, তাহলে আমাদের শরীরকে কীভাবে সেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করব, যেন বিশ্বের অধিকাংশ করোনায় আক্রান্ত মানুষের মতো আমরাও দ্রুত সুস্থ হতে পারি।
করোনাভাইরাস মূলত আমাদের ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি করে। চীন ও ইতালিতে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা যে বয়সের কারণে মারা গেছেন তা নয়। তাঁদের অধিকাংশেরই আগে থেকে ফুসফুসের সমস্যা, হৃদরোগ ছিল। আমাদের দেশের বয়স্কদের মধ্যেও এই সমস্যাগুলো বেশ প্রবল।
কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সীদেরও (৫০-এর নিচে) কিছু জটিলতা সমানভাবে বিদ্যমান—
১. দুর্বল ফুসফুস (অত্যধিক বায়ুদূষণ, অনেক বছর ধরে ধূমপানের ফলাফল)
২. ফুসফুসের রোগ (যেমন, অ্যাজমা, যা আবালবৃদ্ধবনিতা অনেকেরই আছে)
৩. অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস (বাংলাদেশের অল্প বয়স্কদের মধ্যেও এসব রোগ বিরাজমান)
৪. দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা (অস্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়ামের অভাব, যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের জন্য দায়ী)
সুতরাং আপনি অল্প বয়সী বলে আপনার ঝুঁকি নেই—এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। আপনি যুবক হোন কিংবা বৃদ্ধ, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—আমরা এখন কীভাবে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারি? কীভাবে আমরা আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে পারি, যাতে এ রোগের সংক্রমণ হলেও আমরা এর মৃত্যুঝুঁকি কমাতে পারি?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে, আমরা এখন পর্যন্ত করা সব বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য পর্যালোচনা করেছি এবং নিচের এই সাতটি সহজ পন্থা প্রস্তাব করছি:
১. ধূমপান বন্ধ করুন: এই মুহূর্ত থেকে সিগারেট ছেড়ে দিন। এতে আপনার ফুসফুসের ক্ষমতা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গবেষণার মতে ধূমপান এই রোগের তীব্রতা ও নেতিবাচক ফলাফলের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পৃক্ত। এই লেখা পড়া অবস্থায় হাতে সিগারেট থাকলে সেটিও ফেলে দিন। এখনই ধূমপান বন্ধ করতে হবে।
২. রক্তচাপ-ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন: করোনায় আক্রান্ত হলে আপনার ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকে না, যার একটা বড় কারণ হতে পারে নিয়মিত ওষুধ না খাওয়া। তাই আপনার এই রোগগুলো থাকলে এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৩. সবজি ও ফলমূল বেশি করে খান: পুষ্টিজনিত ঘাটতি এবং দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টিহীনতা আমাদের দেহের সাধারণ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়। দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে প্রতিদিন বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল, যেমন: ভিটামিন ডি (ডি৩-10000 /IU/দিন-৩ সপ্তাহ, তারপর 5000 /IU/দিন-২ সপ্তাহ), ভিটামিন সি (১-৩ গ্রাম/দিন) এবং জিংক (২০-৫০ মিগ্রা./দিন) বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
৪. মদপান ছেড়ে দিন: গবেষণায় দেখা গেছে, মদ্যপান রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। যদি আপনার এই অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে নিজের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তাগিদেই মদ পান ছেড়ে দিন।
৫. পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে: বাংলাদেশে অনেক মানুষই নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমান না। এখন লকডাউনের সময় অনেকেরই স্বাভাবিক কাজকর্মের সময় বদলে গেছে, তাই ঘুম হয়তো আরও কম ও অনিয়মিতভাবে হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, দৈনিক সাত থেকে আট ঘণ্টার কম ঘুমালে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই রাতের ঘুম বিসর্জন দেওয়ার উপায় নেই।
৬. প্রতিদিন ব্যায়াম করুন: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের অনেক মানুষই, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, পর্যাপ্ত শারীরিক ব্যায়াম করেন না। তাই প্রতিদিন বাড়ির ভেতর অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটুন, একটু ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম করুন। শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে ঘরের কাজ করুন। এতে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো থাকবে।
৭. দুশ্চিন্তা করবেন না: স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে। সুতরাং করোনার ভয়ে প্যানিক করে আসলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। নিয়মিত নামাজ পড়ুন/নিজ নিজ ধর্মচর্চা করুন অথবা মেডিটেশন করুন। ভালো একটা বই পড়ুন, সুন্দর একটা মুভি দেখে ফেলুন। প্রিয়জনের সঙ্গে একটু ভালো সময় কাটানোর মাধ্যমে দুশ্চিন্তার পরিমাণ কমিয়ে আনুন।
করোনাভাইরাস প্যানডেমিকের রূপ ধারণ করেছে। বিভিন্ন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী এক থেকে দেড় বছরে এই বিশ্বের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ এতে আক্রান্ত হবে।
তাই যত দিন পর্যন্ত না একটি ভ্যাকসিন আমার পাচ্ছি, আসুন সবাই নিজের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সচেতন হই। সুস্থ থাকুন, ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন, সচেতন হোন।
সূত্রঃ prothomalo