|| কল্লোল রায় ||
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউনে সব ধরনের কর্মস্থলে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বন্ধ হয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষদের আয়ের পথ। কিন্তু পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন নিম্ন আয়ের কিছু মানুষ। তেমনি ভাবে পরিবারের সবার খাদ্য যোগাতে সাত বছরের শিশু ফরহাদ কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে এসেছে শহরে। বিক্রি করছে ফেস মাস্ক। সেই আয়ের অর্থ দিয়ে চলছে তার পরিবার।
“মাস্ক নিবেন? মাস্ক? প্রতি পিছ ১০টাকা।” – এভাবেই উলিপুর বাজারে ঘুরে ঘুরে মাস্ক বিক্রি করছে শিশু ফরহাদ। বাড়ি উলিপুর উপজেলার নাড়িকেলবাড়ি গ্রামের কানিপাড়ায়। নারিকেলবাড়ি শিশু কল্যাণ বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণিতে পড়ে সে। মা-বাবা, ২ ভাই ও ১ বোন নিয়ে মোট ৫ জনের সংসারে তার বাবা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবার ইটভাঙার কাজ করে যা উপর্জন হয় তা দিয়ে চলে সংসার। কাজ না থাকলে রাস্তার প্লাস্টিক কুড়ানো তার বাবা মোঃ মজিদের আয়ের অন্যতম উৎস। মাঝে মাঝে তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে দু’পয়সা রোজগার করেন। করোনার জন্য দেশের প্রায় সব ধরণের কর্মস্থল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফরহাদের মা-বাবা কর্মহীন হয়ে পড়লে সে গ্রাম থেকে উপজেলা শহরে চলে আসে কাজের সন্ধানে। এরপর পরিচিত এক দর্জি ফরহাদকে নিজের দোকানে হাতে তৈরি কিছু মাস্ক দেয় বিক্রি করার জন্য। ফরহাদ জানায়, ‘মা-বাবার কোন কাজ নাই, বাড়িতে খাবারও নাই। একটা মাস্ক বিক্রি করলে আমি ৫ টাকা করে পাই, বাকীটা মালিকের। এই লাভের টাকা দিয়ে চাল কিনে বাড়ি ফিরব।’
ফরহাদের মা মোছাঃ পারুল বেগম জানান, ‘মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে, ছোট ছেলে ফরহাদ ২য় শ্রেণীতে পড়ছে। অনেক ইচ্ছা এদের পড়াশোনা করে মানুষ করার। টাকার অভাবে বড় ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে।এখন অভাবের কারনে ছোট ছেলে রাস্তায় নেমেছে, যখন যা কাজ পাচ্ছে করছে। করোনার জন্য এখন আমাদের কাজ নাই। এখন আমরা কি খেয়ে থাকব? এজন্য ছেলে বাজারে গেছে কাজের জন্য।’
মাস্ক তৈরির দোকান সৌখিন টেইলার্স এর মালিক সঞ্জয় রায় বলেন, ‘করোনাভাইরাসের জন্য দেশে মাস্কের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, দামও বেড়েছে। তাই আমরা কম দামে মাস্ক বিক্রি করে সবার কেনার সুযোগ করে দিয়েছি। অপরদিকে ফরহাদের মত অনেকের আয়ের পথও তৈরি হচ্ছে’।